সিবলিং ডে: যেমন হয় ভাই-বোনের মধুর খুনসুটি

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৫, ০৪:০৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

ভাই-বোনের সম্পর্ক—একটি আজীবনের বন্ধন। কখনও বন্ধুর মতো, কখনও অভিভাবকের মতো, কখনও আবার প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো। কিন্তু দিন শেষে, ভাই বা বোনই হয়ে ওঠে আমাদের সবচেয়ে বড় ভরসা, সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী। এই সম্পর্কে ছোট ছোট খুনসুটি, ঝগড়া-বিবাদ, মান-অভিমান, হাসি-কান্না থাকে। সব মিলিয়েই গড়ে ওঠে একটি গভীর, হৃদয়স্পর্শী বন্ধন। মধুর এই সম্পর্ককে উদযাপন করতেই প্রতিবছর ১০ এপ্রিল পালিত হয় সিবলিং ডে।
শুধু ভাই-বোনই নয়, দুই বোন বা দুই ভাইয়ের মধ্যেও থাকে মধুর খুনসুটি। সিবলিংদের সেই মধুর খুনসুটিগুলোই আমদের শৈশব, কৈশোর আর বর্তমানকে রাঙিয়ে রেখেছে রঙিন স্মৃতিতে।

ঝগড়া দিয়েই শুরু
ভাই-বোন মানেই তো ঝগড়া। কখনও খেলনা নিয়ে, কখনও চকলেট নিয়ে, কখনও আবার টিভির রিমোট বা ঘুমানোর জায়গা নিয়েও লেগে যায় ঝামেলা। ছোটবেলায় মায়ের কাছে দোষ চাপানো, “ও-ই প্রথম মেরেছে!” কিংবা “আমি তো কিছু বলিইনি!”—এইসব অভিযোগ যেন প্রতিদিনের রুটিন। ঝগড়া যতই হোক, পর মুহূর্তেই আবার একসাথে খেলা, গল্প করা, হাসি-ঠাট্টা—এটাই ভাই-বোনের সম্পর্কের সবচেয়ে সুন্দর দিক।

গোপন চুক্তি
মাঝে মাঝে ভাই-বোনের মধ্যে হয় গোপন চুক্তি। মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়তি চিপস খাওয়া, পড়াশোনা না করে ভিডিও গেম খেলা, কিংবা কাউকে না বলে পকেটমানি থেকে একসঙ্গে আইসক্রিম খাওয়া—সবই হয় সেই গোপন চুক্তিতে।
তাদের মধ্যে তৈরি হয় এমন এক বোঝাপড়া, যা না বলা সত্ত্বেও হৃদয় দিয়ে বোঝা যায়।

কখনও হিরো, কখনও ভিলেন
ভাই কিংবা বোন একে অপরের জীবনে কখনও হিরো, আবার কখনও ভিলেন! ভাই যদি বোনের জামা কেটে ফেলে, সে হয়ে যায় সবচেয়ে বড় দুষ্টু; আবার সেই ভাই-ই যখন তার বোনকে স্কুলে কেউ বিরক্ত করে, তখন হয়ে ওঠে বোনের সুপারহিরো। বোন যখন ভাইয়ের হোমওয়ার্ক করে দেয় বা তার জন্য গোপনে মজার খাবার রেখে দেয়, তখন সে হয়ে ওঠে ভাইয়ের প্রিয় বন্ধু। এই দ্বৈত চরিত্রই সম্পর্ককে করে আরও বেশি জীবন্ত।

দুরন্ত শৈশবের সাথী
শৈশবের প্রতিটি আনন্দঘন মুহূর্তে ভাই বা বোনের উপস্থিতি থাকে। ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো, বৃষ্টিতে ভিজে কাদা মাখামাখি, দুপুরে গল্পের বই নিয়ে কাড়াকাড়ি সবই বেড়ে ওঠার স্মৃতিকে মধুর করে তোলে।ভাই-বোন থাকলে কোনো দিনই একা লাগে না। দুঃখ, কষ্ট কিংবা আনন্দ—সব ভাগাভাগি করে নিতে একে অন্যের পাশে থাকে।

গোপন কথার আড়াল
অনেক ভাই-বোনই একে অপরের সবচেয়ে বড় ‘সিক্রেট কিপার’। কার ক্রাশ কে, কাকে চিঠি লিখেছে, মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে কী চালাকি করেছে—এসব সব ভাই বা বোন জানে। কখনও আবার সেটা ব্ল্যাকমেইলেও রূপ নেয়—“আমার কথায় না চললে মা‍‍`কে বলে দেব!”এই গোপন গল্পগুলোই পরিণত বয়সে গিয়ে হয়ে ওঠে অমূল্য স্মৃতি।

বড় হয়ে সম্পর্ক আরও গভীর
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঝগড়াগুলো কমে যায়, কিন্তু ভালোবাসা আরও গভীর হয়। স্কুল-কলেজ শেষ হয়ে যায়, কেউ দূরে চলে যায় পড়াশোনার জন্য, কেউ চাকরির জন্য। তবুও ভাই-বোনের মধ্যে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া, “কেমন আছো?”, “কিছু লাগবে?”, “মা-বাবার খেয়াল রাখো”—এইসব কথাই প্রমাণ করে, সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে বদলায়, কিন্তু ভালোবাসা থাকে একই রকম।

আজীবনের সাপোর্ট সিস্টেম
জীবনের প্রতিটি কঠিন সময়ে, ভাই বা বোনই হয়ে ওঠে শক্তি। বন্ধুর অভাব হলে, হতাশায় ভুগলে, কেউ কষ্ট দিলে, ভাই বা বোনের একটি ফোনই মনে শান্তি আনে। তাদের সঙ্গে কথা বললেই যেন সব দুঃখ দূর হয়ে যায়। তারা কখনও আমাদের বিচারক, কখনও শ্রোতা, আবার কখনও কাঁধে মাথা রাখার জায়গা।

সিবলিং ডে কেবল একটি দিনই নয়, এটি ভাই-বোন কিংবা বোন-বোন অথবা ভাই-ভাই সম্পর্ককে সম্মান করা, স্মরণ করার এবং উদযাপন করার একটি উপলক্ষ।