বৈশাখীর ফ্যাশনে নতুন-পুরোনোর মেলবন্ধন

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ হল বৈশাখী পোশাক। প্রতি বছরই এই উৎসব ঘিরে ফ্যাশন দুনিয়ায় চলে নতুন ট্রেন্ডের অনুসরণ। বৈশাখ মানেই রঙ, উৎসব, ঐতিহ্য আর প্রাণের ছোঁয়া। তাই বৈশাখী পোশাকেও ফুটে ওঠে বাঙালিয়ানার গর্ব আর আধুনিকতার ছোঁয়া। এবার ১৪৩২ বঙ্গাব্দে বৈশাখকে ঘিরে ফ্যাশন হাউজগুলোয় দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু নতুন ধারা ও পুরনো ঐতিহ্যের সম্মিলন।

রঙের বাহার
বৈশাখ মানেই লাল-সাদা। তবে এবার এই ট্র্যাডিশনাল রঙের বাইরে গিয়েও দেখা যাচ্ছে অনেক বৈচিত্র্য। গাঢ় নীল, হলুদ, কমলা, ম্যাজেন্টা, গ্রীন, এমনকি প্যাস্টেল শেডেরও দারুণ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে গরমের কথা মাথায় রেখে তুলনামূলক হালকা রঙ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ফ্যাশন হাউজগুলোও তুলনামূলক শীতল ও চোখে আরামদায়ক রঙে ডিজাইন তৈরি করেছে। কেউ কেউ আবার পুরো লাল-সাদা না রেখে তার মধ্যে একটু স্বর্ণালী বা রূপালী কাজ যোগ করে আনছে ভিন্নতা।

আরামদায়ক কাপড়
গরমকালে আরামদায়ক কাপড়ের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। এবার বৈশাখী পোশাকে তুলা, খাদি, মসলিন, লিলেন, জামদানি ও তাঁতের ব্যবহার ব্যাপক। বিশেষ করে হাতে বোনা তাঁতের শাড়ি ও খাদির কুর্তি জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এগুলোর সৌন্দর্য যেমন অনন্য, তেমনি এগুলো গরমের মধ্যে আরামদায়কও। পরিবেশবান্ধব ও স্থানীয়ভাবে তৈরি এসব কাপড় দিয়ে ফ্যাশন হাউজগুলো তৈরি করছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, কামিজ এবং এমনকি ক্যাজুয়াল টি-শার্টও।

নারীদের পোশাকে বৈচিত্র্য
নারীদের বৈশাখী সাজ মানেই শাড়ির আধিপত্য, আর এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার দেখা যাচ্ছে হালকা ওড়না বা দোপাট্টা সংবলিত লুংগি-কামিজ বা সালোয়ার কামিজের আধুনিক রূপ। আরও রয়েছে কুর্তি ও পালাজ্জো বা স্কার্টের সংমিশ্রণ। জামদানি, তাঁতের শাড়ি, বুটিক ও ব্লক প্রিন্ট শাড়ি থাকছে তালিকার শীর্ষে। পাশাপাশি হালকা এমব্রয়ডারির বা কাঁথা স্টিচের কাজ করা শাড়িও জনপ্রিয়।

এছাড়া বিভিন্ন রকমের টপস ও ওভারসাইজ কুর্তিও এবার ট্রেন্ডে রয়েছে। ফ্যাশন সচেতন নারীরা পোশাকে ঐতিহ্য ও আরাম—দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে চাইছেন। তাই হালকা ঝকমকে ডিজাইন নয়, বরং সূক্ষ্ম নকশা ও প্রিন্টই বেশি দেখা যাচ্ছে এবার।

পুরুষদের ফ্যাশনে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন
পুরুষদের বৈশাখী পোশাকে এখনও পাঞ্জাবির প্রাধান্য বজায় আছে। তবে এবার তার ডিজাইনে আসছে নতুনত্ব। হালকা সূতি কাপড়ের পাঞ্জাবিতে ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ কিংবা জ্যামিতিক নকশা বেশ জনপ্রিয়। খাদি, কটন ও লিনেনের পাঞ্জাবি বা ফতুয়াতে এবারের বৈশাখে আরাম আর স্টাইল দুইই মিলছে। কেউ কেউ আবার জিন্স বা ট্রাউজারের সঙ্গে ম্যাচ করে হালকা হাতার পাঞ্জাবি পরছেন।

পাঞ্জাবির বাইরে এবার ক্যাজুয়াল শার্ট, ফতুয়া ও কুর্তাও জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা একটু ভিন্ন ধাঁচের পোশাক পছন্দ করে, তারা রং-বেরঙের ফতুয়া ও স্লিম ফিট শার্টকে পছন্দের তালিকায় রাখছে।

শিশুদের পোশাকে রঙিন ছোঁয়া
শিশুদের জন্যও বৈশাখী পোশাক তৈরি হচ্ছে রঙিন ও আরামদায়কভাবে। মেয়েদের জন্য থাকছে ছোট জামদানি বা কটনের শাড়ি, লেহেঙ্গা-চোলি কিংবা কামিজ সেট। ছেলেদের জন্য থাকছে মিনি পাঞ্জাবি, ফতুয়া এবং আরামদায়ক টি-শার্ট। রঙের ব্যবহারেও থাকছে বৈচিত্র্য—লাল, হলুদ, সবুজ, নীল সবই মিলছে শিশুদের পোশাকে।

আনুষঙ্গিক সাজসজ্জা
বৈশাখী পোশাকের সাথে মানানসই সাজ-সজ্জাও গুরুত্বপূর্ণ। নারীরা শাড়ির সাথে মিলিয়ে ফুলের গয়না, টিপ, কাঁসার বা কাঠের তৈরি হাতের চুড়ি, খোপায় গাঁদা বা রজনীগন্ধার ফুল ব্যবহার করছেন। ছেলেরা পাঞ্জাবির সঙ্গে মাথায় গামছা বাঁধা বা হাতে গামছা নেওয়ার ট্রেন্ডও এবার বেশ চলছে। অনেকেই আবার পায়ে দেশি চটি বা স্যান্ডেল পরছেন, যা পোশাকের সাথে মানিয়ে যায়।

ফ্যাশনের সঙ্গে সচেতনতা
এবারের বৈশাখী ফ্যাশনে একটা বড় ট্রেন্ড হচ্ছে ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন’। স্থানীয় তাঁতিদের তৈরি পোশাক কেনার দিকে আগ্রহ বাড়ছে। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় তৈরি পোশাক বাজারে আনছে, যা খুবই প্রশংসনীয়।

বৈশাখী পোশাক আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। এবারের বৈশাখেও সেই চিরচেনা ঐতিহ্য নতুনত্বের ছোঁয়ায় আরও সমৃদ্ধ হয়েছে।