রমজান মাস বরকতের মাস। এই মাসে আল্লাহ্ সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য রোজা রাখা হয়। সেই সঙ্গে যাকাত দেওয়া এবং ফিতরা আদায় করতে হয়। ফিতরা ইসলামি অনুশাসনের এক অনন্য নির্দশন। সাদকাতুল ফিতর দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে বিধিবদ্ধ হয়। যা অসহায় গরিব দুঃখীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। গরিব প্রতিবেশির ঈদ আনন্দকে উপভোগ করার উদ্দেশ্যেই ফিতরা আদায় করা উত্তম। এতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি পাওয়া যায়।
ফিতরা আদায় কেন করবেন
ফিতরা বা সাদকাতুল ফিতর হলো সেই নির্ধারিত সাদকা। ঈদুল ফিতরের নামাজে যাওয়ার আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের মধ্যে নির্দিষ্ট ফিতরা বন্টন করতে হয়। একে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাত্ সাড়ে ৭ ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্য থাকে তবে তাকে ফিতরা আদায় করতে হবে। এটি নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার জন্যই ওয়াজিব।
‘ফিতর’ আদায়ের অর্থ হলো ‘রোজা ছাড়া’। অর্থাৎ রমজানের রোজা ছাড়ার কারণে বা রোজার ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্য ফিতরা আদায় করা উত্তম। ফিতরার মাধ্যমে রোজার যাবতীয় ভুলগুলো থেকে আত্মশুদ্ধি পাওয়া যায়। যা আত্মশুদ্ধিও করে।
ফিতরা কাদের দিতে হয়
সাধারণত ফিতরা অসহায় প্রতিবেশি ও স্বজনদের মধ্যে বন্টর করতে হয়। আবার গরিবদের মধ্যেও বন্টন করা যায়। এটি দান-অনুদান ও উপহার সামগ্রীর মাধ্যমে আদায় করা হয়। অসচ্ছল, অসহায় ব্যক্তিদের মাঝে বন্টন করা উত্তম। ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই এটি আদায় করতে হবে।
ফিতরা আদায়ের ফজিলত
মহান আল্লাহ বিগত এক বছর সুস্থ ও নিরাপদ রাখার পর বরকতময় মাস রমজান দান করেছেন। সুস্থ দেহের যাকাত হলো ফিতরা আদায়। এটি আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
ফিতর হলো রোজার ভুল-ত্রুটির ঘাটতির ক্ষতির পরিপূরক। এটি মানুষের পাপ তথা গোনাহকে ধ্বংস করে দেয়।
ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে ঈদের দিন গরিব ও মিসকিনদের আনন্দ-বিনোদন, উত্তম পোশাক ও খাবার নিশ্চিত হয়। তারাও ধনীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই উদ্দেশ্যেই ফিতরার সুব্যবস্থার প্রচলন করেছেন।
হাদিসে বলা হয়, হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের স্বাধীন ও ক্রীতদাস পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সবার জন্য এক সা’ (প্রায় সাড়ে ৩ কেজি) খেজুর বা যব খাদ্য (আদায়) ফরজ করেছেন। (বুখারি, মুসলিম)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায় এর জমানায় আমরা সাদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্তু। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বুখারি)
তিনি আরও বলেন, আমরা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু। যেমন- এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ। (বুখারি)
ফিতরা আদায়ের পরিমান
হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা।
হজরত ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলইহির মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম এবং খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারাই আদায় করা উত্তম।’
হজরত ইমাম শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি আলইহির মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোত্কৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা শ্রেয়। অন্য সব ইমামের মতও অনুরূপ।’
সাদকার ক্ষেত্রে সব ফকিহর সর্বসম্মত ঘোষণা হলো- ‘যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারী তাই আদায় করা।’ (আল মুগনি, আওজাজুল মাসালিক)