নারী দিবস

নারীদের নিরাপত্তা কীভাবে দেবেন

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতে প্রতিনিয়তই সোচ্চার হচ্ছে বিশ্ব। তবু নারীদের নিরাপত্তা যেন এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের চিত্রও একই। নারীরা এখনো নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই দিন কাটায়। 

নারীর নিরাপত্তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও মানবিক বিষয়। কর্মস্থল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার, রাস্তা কিংবা অনলাইন—সব ক্ষেত্রেই নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশ্বব্যাপী নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, সাইবার অপরাধ, গৃহ নির্যাতন এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নারীর জীবনকে বিপন্ন করছে। তাই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীর জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

নারীর আত্মরক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি

নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখা উচিত। আত্মরক্ষার জন্য কারাতে, কিকবক্সিং বা অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে।  প্রয়োজনে আত্মরক্ষার সরঞ্জাম (যেমন: পেপার স্প্রে, হুইসেল, ইলেকট্রিক শক ডিভাইস) বহন করতে হবে। অপরিচিত পরিবেশে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। সন্ধ্যার পর একা নির্জন স্থানে যাওয়া উচিত হবে না। অপরিচিত কারও কাছ থেকে পানীয় বা খাবার গ্রহণ না করা, জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করা এবং মোবাইলে ট্র্যাকিং বা লোকেশন শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত।

পারিবারিক সচেতনতা ও শিক্ষা
নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে কন্যাশিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। 
শিশুর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। তাদের "গুড টাচ" ও "ব্যাড টাচ" সম্পর্কে শেখাতে হবে। আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সচেতন করতে হবে।নারী সদস্যদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ শেখানো উচিত।

কর্মস্থলে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা

নারীরা যাতে অফিস বা কর্মক্ষেত্রে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অফিসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। 
সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি বিরোধী কমিটি থাকতে হবে। অভিযোগ জানানোর জন্য গোপনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা রাখতে হবে। নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। অফিসে নারীবান্ধব নীতিমালা তৈরি করতে হবে। নির্যাতনের শিকার হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যতম দায়িত্ব। ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। 
সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে শিক্ষকদের অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধু বা পরিচিতদের সঙ্গে  চলাফেরা করতে হবে। ইভটিজিং বা হয়রানির শিকার হলে প্রতিবাদ জানাতে হবে।

নারীর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

সাইবার অপরাধ নারীদের জন্য এক নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য সাবধানে শেয়ার করতে হবে।সন্দেহজনক মেসেজ বা লিংকে ক্লিক করা যাবে না।  
নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত তা পরিবর্তন করতে হবে। অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে জানা ও প্রয়োগ করার কৌশল জানতে হবে।ইন্টারনেটে অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

রাষ্ট্র ও আইনের ভূমিকা

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও গৃহ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের জন্য বিশেষ আইনগত সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা কর্মসূচি চালু করতে হবে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও এনজিওদের ভূমিকা জোরদার করতে হবে।

গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা

নারীরা প্রায়ই গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। গণপরিবহনে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নারীদের জন্য আলাদা গাড়ি বা সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীদেরও উচিত গাড়িতে ওঠার আগে আশপাশ দেখে নেওয়া এবং 
সন্দেহজনক পরিস্থিতি হলে দ্রুত অন্য যাত্রীদের জানাতে হবে।