দর্শক ছবিটা শেষে গণহত্যাকে মনে রাখবে: কৃষ্ণেন্দু বোস

পার্থ সনজয় প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম
কৃষ্ণেন্দু বোস

বে অব ব্লাড। রক্তের সাগর। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের চালানো গণহত্যা নিয়ে ভারতীয় স্বাধীন প্রামাণ্য নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু বোসের ৯৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের নির্মাণ। ছবিটি নিয়ে আগস্টে ঢাকায় এসেছিলেন এই নির্মাতা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বেশ কয়টি ভেন্যুতে প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। এর মাঝেই ছবিটির ‘নির্মাণযাত্রা’র কথা তিনি ভাগ করেছেন পার্থ সনজয়ের সঙ্গে।


প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু বোস  (বায়ে)সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন পার্থ সনজয়কে।

 

প্রশ্ন: একাত্তরে গণহত্যা। এত বড় ক্যানভাস। কেমন করে এগুলেন?
কৃষ্ণেন্দু বোস:  অনেক জায়গা থেকে আর্কাইভ ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। অনেক খুঁজতে হয়েছে। রিসার্চ করতে হয়েছে। একটা ঘটনা বলি, ভোলায় যে সাইক্লোনটা হয়েছিল, আমি গবেষণা করে দেখলাম, এটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ২৫ মার্চ তারিখে যা হয়েছিল, তার শুরুটা ওখানে। এটা আমি আমার ছবিতে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। আমি প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজছিলাম। যিনি সাইক্লোনের সময় ওখানটায় ছিলেন। তো একজনকে আমি পেলাম। তিনি আমাকে বললেন, “আমার ১৫ বছর বয়স তখন। আমি আওয়ামী লীগ করতাম। ভোলায় ঐ সময় একমাত্র আমিই ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম। সাইক্লোনের দুই-তিনদিন পর বিদেশি সাংবাদিকেরা ক্যামেরা নিয়ে এসেছিল। আমাকে ইন্টারভিউ করেছিল।” 


তখনই আমার মাথায় খেলল, ইংরেজি বলতে পারতেন! ক্যামেরায় কথা বলেছেন। তার মানে ফুটেজটা তো আছে কোথাও। নিশ্চয়ই কোন টেলিভিশন ক্রু এসেছিল। শ্যুট করতে। তখন আমি খুঁজতে আরম্ভ করলাম। দেখলাম, এসোসিয়েটেড প্রেস কাভার করেছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে ফুটেজ নিয়েছি। ফিল্মটা দেখার সময় দেখবেন, ভোলার এরিয়েল ছবি আছে হেলিকপ্টার থেকে নেয়া। এরকম করে আমরা আর্কাইভ থেকে ছবি বের করেছি। আর আর্কাইভ তো দেখালে হবে না! এটা শুধু দেখানো না, এই ছবিটা ভীষণ কন্ট্রাভার্সিয়াল হতে পারে। কারণ অনেক লোকেরা অনেক কিছু বলেছে। তারা সবাই প্রত্যক্ষদর্শী। 


একজন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল, আমি তাদের কথা রাখব। কিন্তু ওরা যে ঠিক কথা বলছে, কতটা ঠিক বলছে, কতটা ইমাজিনেশন, তা আমরা কি করে যাচাই করব? তার জন্য এভিডেন্স হিসেবে একটা নিউট্রাল পার্সপেক্টিভ থেকে দেখতে হবে, তারা কী বলেছেন, সত্যিকারে কী হয়েছিল। তো নিউজ ফুটেজ, আর্কাইভ, অডিও-এগুলো তৃতীয় পক্ষ। এগুলো এভিডেন্সের মতো এসেছে। সেরকমভাবে আমরা ফিল্মটাকে স্ট্রাকচারের মতো করেছি। এখন আশা করি, ফিল্মটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ তো বলছেই যা বলবার, একদিকে আমরা নিউজ ক্লিপিং, আর্কাইভ দেখিয়ে আমরা সে ঘটনাগুলো একটা এভিডেন্সের মতো ব্যবহার করেছি। কারণ আমার মনে হচ্ছিল, এটা খুব দরকার। কারণ, আমরা এই ছবিটা বিদেশিদের জন্য বানিয়েছি। 


কেননা, সাউথ এশিয়ার লোকেরা মোটামুটি বিষয়টা জানে। বিষদ না জানলেও ধারণা আছে। কিন্তু বিদেশে কেউ জানে না। এই ব্যাপারটা আমরা ভাবলাম। বিদেশে দেখানো বিশেষ জরুরি। আমরা এই অঞ্চলের মানুষ কিছুটা ইমোশনাল। বিশেষ করে বাঙালি। ভারতীয়রা। বিদেশিরা এই জায়গাটায় রেশনাল। এভিডেন্স চায় ওরা। ওরা যা বলে তা হলো, ‍‍`ঠিক আছে ঘটনাটা ঘটেছে। আপনি বলেছেন আমি শুনলাম। আমার মনটাও খারাপ হলো। কিন্তু আমি আপনাকে কিভাবে বিশ্বাস করবো?‍‍` তার জন্য যৌক্তিক প্রমাণ চায়। সে জায়গা থেকে চিন্তা করে, আমরা আর্কাইভ থেকে ছবি সংগ্রহ করলাম।

 

প্রশ্ন: কেন মনে হলো, এটা করতে হবে? কবে থেকে শুরু করেছেন? 
কৃষ্ণেন্দু: ছবিটা শুরু করি ২০১৯-এ। আমাদের আইডিয়া ছিল, ২০২১-এ ৫০ বছর হচ্ছে বাংলাদেশের। বছর দুয়েকের মধ্যে আমরা ছবিটা শেষ করতে পারব। এরমধ্যে কোভিড হয়ে গেল। আমাকে ছবিটার জন্য আমেরিকা, লন্ডন, আর্জেন্টিনা-অনেক জায়গায় ঘুরতে হলো। বাংলাদেশ-ভারত তো আছেই। শেষ করতে চার বছর লেগে গেল।

 

২০১৯-এ দশ মিনিটের ট্রেলার বানিয়েছিলাম। নিজে শ্যুট করে। বাংলাদেশে এসে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে। মুনতাসীর মামুন সময় দিলেন, সাজ্জাদ জহীর সময় দিলেন। বেশ কয়েকজন বীরাঙ্গনার সাথে কথা বললাম। আমি একটা দশ মিনিটের ট্রেলার বানিয়েছিলাম। 


সে ট্রেলার নিয়ে আমি ফ্রান্সে যাই। সেখানে কানে প্রতি বছর একটা চারদিনের আয়োজন হয়। সারাবিশ্বের বড় বড় ব্রডকাস্টার, টেলিভিশন চ্যানেল থেকে সবাই আসে। কন্টেন্ট কিনতে। কো প্রোডাকশন করতে। আমি গিয়েছিলাম ফান্ড রাইজিংয়ের ভাবনা থেকে। দশ মিনিটের ট্রেলারটা অনেক লোককে দেখিয়েছি। আমি শকড। কেউই জানে না, একাত্তরে এমনটা হয়েছে। আমি বললাম, তোমরা হলোকাস্টে মৃত্যুর কথা জানো। রুয়ান্ডাতে কী হয়েছে। কম্বোডিয়াতে কী হয়েছে। সার্বিয়াতে কী হয়েছে। ভিয়েতনামে কী হয়েছে। কিন্তু তোমরা বাংলাদেশের কথা জানো না! ত্রিশ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। এক কোটি লোক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।


তখন আমার রাগ হলো। মনে হলো, ওরা জানে না কেন? ভারতীয় বাঙালি হিসেবে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ছবি করা খুব দরকার। তারপর চার বছরে শেষ করলাম।

 

প্রশ্ন: ভারতে অনেকেই, এমনকি বিশ্বেও, একাত্তরের যুদ্ধটাকে ‘ভারত-পাকিস্তান’ যুদ্ধ হিসেবে দেখে। আপনি এই ন্যারেটিভটাকে কিভাবে দেখেন? 
কৃষ্ণেন্দু: আমি যখন ছবিটা বানাতে শুরু করি তখন আমার মাথায় এই ন্যারেটিভটা ছিল। অনেকে এটাকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখে। কিন্তু ভারতের সম্পৃক্ততা তো শেষ তেরো-চৌদ্দ দিন। যে নয় মাসজুড়ে পাকিস্তান গণহত্যা চালিয়েছিল। গণহত্যা হলো। আমি আশা করছি, এই ছবিটা দেখে ভারতীয়রা তো অবশ্যই, সবাই বুঝতে পারবে, পুরো গল্পটা ১৩ দিনের নয়। এটা নয় মাসের গল্প তো বটেই। এটা ২৪ বছরের গল্প।

 

প্রশ্ন: আপনি স্বাধীন নির্মাতা। বিশাল এই ক্যানভাসকে ধরতে অর্থসহ নানা চ্যালেঞ্জ কিভাবে সামলেছেন?
কৃষ্ণেন্দু: স্বাধীন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রিসোর্স, অর্থ। সেই চ্যালেঞ্জ ওভারকাম করতে চেষ্টা করেছি অনেক। কিন্তু কোথাও বিশেষ পাইনি। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। যদিও অনেক টাকাপয়সা আমাদের নিজেদের থেকে লেগেছে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার অনেকে টাকা দিয়েছে। কিন্তু যারা টাকা দেয়, যেমন কোন অর্গানাইজেশন, সরকার, সবার কিন্তু একটা মতামত থাকে। সেটা মুশকিল হয়ে যায়। এরকম একটা ছবি যেখানে অনেক মতামত আছে। অনেক দেশের সম্পৃক্ততা আছে। সেখানে একটু মুশকিল হয়ে যায় আমাদের মতো স্বাধীন নির্মাতার। আমরা নিজের কথা বলতে চাই। আমার সব ছবি তাই। আমি নিজের মতো করে গল্পটা বলতে চাই। আমি যেমন করে বুঝতে পেরেছি পুরো জিনিসটা। টাকা নিলে তা হয়তো আমার মতো করে নাও হতে পারতো। কিন্তু যেহেতু এটা ‍‍`পিউরলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম‍‍`, এখানে কারো বক্তব্য নেই। যদি কোন ভুল হয়ে থাকে সেটা আমার। ভালো হলে, সেটাও আমাদের। কিন্তু অন্যদিকে ছবিটা করা খুব কঠিন ছিল। 


বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, আমেরিকা, আর্জেন্টিনা। বলা যায়, এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, সাউথ আমেরিকা—চারটি মহাদেশ নিয়ে ছবিটা। যেহেতু টাকা পয়সা নেই। যেহেতু ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি। আমি একা গিয়ে করেছি। যেখানে গিয়েছি লোকাল ক্রু‍‍`র সাহায্য নিয়েছি। বাংলাদেশে ২৫/৩০ জন মানুষ আমাকে সাহায্য করেছে। লন্ডন গেলাম সেখানেও লোকাল ক্রু। যদিও আমার ডিওপি একই ছিলেন। কিন্তু আমেরিকায় গেছি, ওখানেও লোকাল ক্রু। কাউকে চিনি না। প্রথমবার শ্যুট করছি। কিন্তু দারুণ সহযোগিতা পেয়েছি। যারাই এরকম একটা গণহত্যার কথা শুনেছে, তারাই দারুণ সহযোগিতা করেছে।

 

আপনি যদি ফিল্মটি দেখেন, আর্জেন্টিনার একজন আছেন দানিয়েল বলে, তিনি জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ। বুয়েন্স আয়ারস ইউনিভার্সিটিতে জেনোসাইড ডিপার্টমেন্টে আছেন। ২০১৮-তে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। আমি চাইছিলাম, ২৫ জন লোকের বক্তব্য আমার ফিল্মে আছেন। তারা সবাই প্রত্যক্ষদর্শী। একজন নির্মাতা হিসেবে আমি চেয়েছি, কেউ একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ আমাদের বলবেন, জেনোসাইডে কী হয়? যার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই। সেরকম একটা মানুষ আমার ছবিতে দানিয়েল।

 

প্রশ্ন: ‘বে অফ ব্লাড’ বিশ্বের কাছে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে কতটা সহায়ক হবে?  
কৃষ্ণেন্দু: আমি যদি বলি, এই ছবিটা স্বীকৃতি পাবার জন্য করা হয়েছে, এমন দাবী আমি করব না। কিন্তু স্বীকৃতি বিষয়টা আমার মাথায় ছিলো। কেননা আমি যখনই যার সঙ্গে কথা বলেছি, বাংলাদেশে কিংবা বাইরে, তারা বলেছে ৫২ বছর হয়ে গেল স্বীকৃতি তো নেইই, মানুষ জানেও না বিষয়টা। তাই আমার আশা, স্বীকৃতি হবে কি না, তা আমি বলতে পারব না, কিন্তু এই ছবিটা সে হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মধ্যে স্বাক্ষ্য প্রমাণাদি আছে। এই ছবিটার দেড় ঘন্টা যদি ব্যবহার করা যায় তা হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

 

ছবি যারা বানায়, আমার মতো ফিল্ম মেকার, আমি শুধু ছবি বানাতে পারি। তার সঙ্গে আপনার মতো সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিতে পারি। এর বেশি কী করতে পারি? এটা বাংলাদেশের কাজ। বিশ্বের কাজ। ৯৫ মিনিটের এভিডেন্স দিচ্ছি, দেখুন। একটা জায়গায় এতগুলো প্রমাণ, আমার মনে হয় না কোনো ফিল্মে আছে। হয়তো বইতে আছে। বিভিন্ন জায়গায় আছে। সেসব নিয়ে আমরা একটা ৯৫ মিনিটের ছবি বানাতে পেরেছি। আশা করতে পারি, শক্তিশালী এভিডেন্স হয়ে স্বীকৃতির একটা আলোচনা শুরু হবে। আজকে কেউ জানে না। কোন আলোচনা নেই। বিতর্ক নেই। ফিল্মটা যদি তা শুরু করে আমি মনে করি, বড় কাজ হয়েছে।

 

প্রশ্ন: নির্মাণ শেষে, আপনি কি সন্তুষ্ট?
কৃষ্ণেন্দু: সব নির্মাতাই ভাবে, একটু ত্রুটি রয়ে গেলো। আরো ভালোভাবে করা যেত। সে হিসেবে নিজের কোন ছবি নিয়েই আমি শতভাগ সন্তুষ্ট নই। কিন্তু আমি মনে করি, ক্রিয়েটিভলি এই ছবিটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ছবিতে যারা কাজ করেছে, আমার টিম, এডিটিং করেছেন ডেভিড, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই ছবিটা ‍‍`এডিটিং ফিল্ম‍‍`। আমাদের প্রায় ৪০/৫০ ঘন্টা ইন্টারভিউ, ফুটেজ, রাশেস মিলিয়ে কন্টেন্ট। ২৫ জনের ইন্টারভিউ। প্রত্যেক ইন্টারভিউ ১/২ ঘন্টা করে। ধরুন ৩০ ঘন্টার ইন্টারভিউ। সেখান থেকে আমরা দেড় ঘন্টায় নামিয়েছি। এত জটিল গল্প। যেখানে আমেরিকা আছে। কিসিঞ্জার আছে। নিক্সন আছে। পাকিস্তান। ইয়াহিয়া। চায়না। গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধ তো আছেই। এটা গ্লোবাল স্টোরি।

 

প্রশ্ন: ছবিটির ‘স্টোরিলাইন’ বুনতে কোন বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছেন?
কৃষ্ণেন্দু: আমাদের একটা চিন্তা ছিল, ৫০ বছরের পুরোনো গল্প আমরা কি করে ভিজুয়ালাইজ করব? ইন্টারভিউ তো আছে। কিন্তু দেখাবো কী? আমরা রিকন্সট্রাকশন করতে চাইনি। ড্রামাটাইজ করা, রিকন্সট্রাকশন করা আমার কাছে ফেইক লাগে। সবাই বুঝতে পারে। আমার ডিওপি বললো, ‍‍`অতো চিন্তা করছ কেন? আমরা এই ভিজুয়ালগুলোই দেখাবো। ঢাকা শহর। আজকের বাংলাদেশ। আজকের যে ভিজ্যুয়াল, সেগুলোই দেখাব।‍‍` 


সেভাবে আমারা স্লোমোশনে শ্যুট করেছি। শৈলি আর নান্দনিকতার মিশেলে। ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবে, ঐ জায়গাটায় চলে যাচ্ছে দর্শক। আজকের ভিজ্যুয়াল। রিকশাওয়ালা আছে। গাড়ি ঘোড়া আছে। আজকের ঢাকা শহর। আমরা কিছুটা ‍‍`ডিস্যাচুরেট‍‍` করেছি। কালারটা একটু কমিয়ে দিয়েছি। আবার সাদা কালো করিনি। তাতে কনফিউশন হতো। কোনটা আর্কাইভ, কোনটা রিয়েল ফুটেজ! আমরা করিনি। কারণ আমরা দর্শকের সাথে প্রতারণা করতে চাইনি। এটাকে ‍‍`সিমলেস ভিজ্যুয়াল স্টোরি‍‍` মনে হবে।

 

এই ছবিতে, ভারত ছোট্ট একটা অংশ। আমার ফোকাস ছিলো গণহত্যা নিয়ে। এজন্য এটা একটা কঠিন ছবি। একদিকে আমি ইতিহাসটা বলতে চাইছিলাম। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ অব্দি। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ আছে। ভারতের সম্পৃক্ততা আছে। যুদ্ধ আছে। আমি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে কি করে গল্পটা বলব, তা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমার মনে হয়, যখন দর্শক ছবিটা শেষে করে বাড়ি ফিরবে, অনেক দিন, মাস, বছর পর গণহত্যার বিষয়টা মনে রাখবে।