যতীন সরকার বাংলাদেশের প্রগতিবাদী লেখক, চিন্তাবিদ ও শিক্ষক হিসেবে প্রখ্যাত। ষাটের দশক থেকে আজ অবধি দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত আছেন তিনি। মননশীল ও মুক্তচিন্তার স্বাক্ষর বহনকারী এ জ্ঞানসাধক অপশক্তির বিরুদ্ধে এখনো লড়ে যাচ্ছেন তাঁর বলিষ্ঠ কলম ও কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা বলেন এ শিক্ষাবিদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ।
সংবাদ প্রকাশ: সংবাদমাধ্যমের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
যতীন সরকার: সংবাদপত্রের কাছে প্রত্যাশা তো প্রচুর। কিন্তু সব সংবাদপত্র সব রকমের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থেকে আমি যেটা অনুভব করেছি যে, শিক্ষার ব্যপারে যে ধরনের ব্ক্তব্য আসা উচিত, শিক্ষা সংস্থাগুলোকে যেভাবে পর্যালোচনা করা উচিত, সমাধানের দিকে যাওয়া উচিত, সেটা হয় না। আমাদের শিক্ষা সংস্থাগুলোকে এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমাদের সমগ্র সমাজের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই শিক্ষা সম্পর্কে এই পত্রিকাগুলো সমাধানের পথ যদি পদ্ধতি বাতলাতে পারে, এই সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে পারে, তাহলে যথার্থ অর্থবহ হবে বলে আমি মনে করি। এবং সংবাদ প্রকাশ সেই কাজটি করবে বলে আমি আশা করি।
সংবাদ প্রকাশ: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে আমাদের গণমাধ্যমে এগিয়েছে নাকি পিছিয়েছে, আপনার কী মনে হয়?
যতীন সরকার: স্বাধীনতা-পরর্তীকালে আমাদের গণমাধ্যম খুব বেশি এগিয়েছে এটা বলা চলে না। বরং স্বাধীনতার আগে, স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে স্বাধীনতার পক্ষ অবলম্বনে আমাদের পত্রিকাগুলো যে ভূমিকা রেখেছে, এখনকার পত্রিকাগুলো স্বাধীনতাকে যথার্থ অর্থে সার্থক করে তোলার জন্য যা করা উচিত, স্বাধীনতা যে আমাদের পরাধীনতার দিকে নিয়ে গেছে বর্তমানে, পাকিস্তানের ভূত যে আমাদের ওপর চেপে বসেছে, এই সমস্ত ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আমাদের পত্রিকাগুলোর যে ভূমিকা থাকা উচিত ছিল, স্বাধীনতা-পরর্তীকালে সেই ভূমিকা পত্রিকাগুলো রাখছে বলে আমি মনে করি না।
সংবাদ প্রকাশ: তাহলে কি স্বাধীনতার পর সংবাদমাধ্যম সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পারেনি?
যতীন সরকার: এককথায় উত্তর হলো-না। সাধারণ মানুষের কথা বলা, সাধারণের কাছে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের যে ভূমিকা থাকা উচিত ছিল, সে ভূমিকা আমাদের সংবাদপত্রগুলোর প্রায় নেই বললেই চলে।
সংবাদ প্রকাশ: তাহলে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ কী?
যতীন সরকার: ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তো একটা কথা আমি সব সময় বিশ্বাস করি, ‘অতীতের চেয়ে নিশ্চয়ই ভালো হবেরে ভবিষ্যৎ।’ বর্তমানে যে অবস্থা আছে, সেই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি এবং এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা একটা বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমার আশা।
সংবাদ প্রকাশ: একদিকে করোনার প্রকোপ, অন্যদিকে দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
যতীন সরকার: এই সম্পর্কে খুব হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর এ ব্যাপারগুলো যে কীভাবে সমাধান করা যাবে সারা পৃথিবীর বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করে কিছু পাচ্ছেন না। কাজেই এ অবস্থাটা যে কী হবে, এ সম্পর্কে বলা খুব কঠিন অবস্থা।