হজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে সমবেত হওয়া হাজার হাজার মুসলিম হাজির হয়েছেন আরাফাত ময়দানে। এরমধ্য দিয়ে তারা অংশ নিলেন হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায়। সমবেত হওয়া হজ তীর্থযাত্রীদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে এই ময়দান।
আরব নিউজ বলছে, শুক্রবার সুর্যাস্ত থেকে আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা শুনবেন তারা। এর আগে জুমার নামাজ ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। এ বছর হজের খুতবা দেবেন মসজিদে নামিরার খতিব মুহাম্মাদ আবদুল করীম আল-ঈসা। আরাফাত ময়দানে হজের খুতবা রেডিও ও টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। বাংলাসহ ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচারিত এ খুতবা।
হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য শুক্রবার ভোরের আগেই তারা সমবেত হতে থাকেন আরাফাতের ময়দানে। এর আগে বৃহস্পতিবার সারাদিন ও রাত তারা সেখানে ইবাদতের মধ্য দিয়ে কাটান। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় তারা জিকির করেন, নামাজ পড়েন জামাতে। বুধবার তারা পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরীফ তাওয়াফ করেন। এরপর রাতে এশার নামাজের পর থেকে জড়ো হতে শুরু করেন কাবা শরিফ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তাবুনগরী মিনায়।
ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ। সেলাইবিহীন শুভ্র এক কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানেই থাকবেন। যার যার মত সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে ইবাদত করবেন। হজের খুতবা শুনবেন।
মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, আদি পিতা আদম ও আদি মাতা হাওয়া পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতের ময়দানে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। ১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হয় স্বল্প সময়ের জন্য।
প্রতিবছরের মতো এবারও হজের দিন ভোরে কাবা আচ্ছাদিত করা হয় নতুন গিলাফে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সভাপতির তত্ত্বাবধানে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর নতুন গিলাফ পরানো হয়।
আরাফাতের ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আবারও মিনায় ফেরার পথে শুক্রবার সন্ধ্যায় মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন সমবেত মুসলমানরা। মুজদালিফায় রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশ্যে ছোঁড়া হবে। শনিবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুঁড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
মহামারীর বিধিনিষেধের মধ্যে গত দুই বছর হজ হয়েছে সীমিত পরিসরে। ২০২০ সালে কেবল সৌদি আরবে অবস্থানরত ১০ হাজার বিদেশিকে হজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৬০ হাজার। মহামারীর ভয়বহতা কাটিয়ে ওঠায় দুবছর পর কিছুটা বড় পরিসরে হজ হচ্ছে এবার। এ বছর বিভিন্ন দেশের ১০ লাখ মুসলমানকে হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে সৌদি আরব। তবে এ সংখ্যাও মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় অর্ধেক।
এ বছর যারা হজ করছেন, তাদের মধ্যে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন, বাকিরা সৌদি আরবে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে এবার হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন ৬০ হাজার মুসলমান।
হজ করতে আসা এই বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বে রয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজে আসা ব্যক্তিদের জন্য মক্কা ও মিনায় ২৩টি হাসপাতাল এবং ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে। নিবিড় পরিচর্যার জন্য এক হাজার শয্যা ও বিশেষ করে ‘হিট স্ট্রোকের’ রোগীদের জন্য দুইশর বেশি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।