সাংবাদিক এখন ফুটপাতের খাবার বিক্রেতা

গোলাম আনোয়ার সম্রাট প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২, ১০:০৪ পিএম

একসময় ছিলেন বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করা সাংবাদিক, আর এখন সেই ব্যক্তি রাস্তার পাশে ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেন। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে গেছে মুসা মুহাম্মদির জীবন। সাংবাদিকতা ছেড়ে জীবন বাঁচাতে রাস্তায় পাশে খাবার বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। এমন চিত্রের দেখা মিলেছে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে।

সম্প্রতি বিবিসি পশ্তুর সাবেক প্রতিনিধি কবির হাকমল টুইটারে মুসা মুহাম্মদির তিনটি ছবি শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন ‘তালেবানের অধীনে আফগানিস্তানের সাংবাদিকদের জীবন’।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক কবির আরো লিখেন, “মুসা মোহাম্মদি বছরের পর বছর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উপস্থাপক ও রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তার পরিবারের খাওয়ানোর মতো কোনো আয় নেই। কিছু অর্থ উপার্জনের জন্য রাস্তার পাশে খাবার বিক্রি করছেন তিনি।”

গত বছরের আগস্টে কাবুল দখল নেয় তালেবান। দেশে প্রজাতন্ত্রের পতনের পর আফগানরা নজিরবিহীন দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন বিবিসির এই সাবেক প্রতিনিধি।

এদিকে এই সাবেক সাংবাদিকের এসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিক্রিয়া জানান তালেবান নিয়োগপ্রাপ্ত আফগানিস্তানের জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের বর্তমান মহাপরিচালক আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক।

আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক এক টুইট বার্তায় লিখেন, “একটি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনের মুখপাত্র মুসা মোহাম্মদির বেকারত্বের দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের পরিচালক হিসেবে আমি তাকে আশ্বস্ত করছি, আমরা তাকে জাতীয় বেতার ও টেলিভিশনের কাঠামোর মধ্যেই নিয়োগ দেব। আমাদের সকল আফগান পেশাদারদের প্রয়োজন।”

মুসা মোহাম্মদিকে পুনরায় সাংবাদিকতায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও, প্রকৃতপক্ষে এটাকে ফাঁকা বুলি হিসেবে দেখছেন অন্যান্য আফগান সাংবাদিকরা। কারণ, তালেবানের অধীনে কোনো সাংবাদিক ভালো নেই বলে অভিযোগ রয়েছে আফগান সাংবাদিকদের। তারা ঠিকমতো খবর সংগ্রহ করতে পারে না, প্রায় সময় তালেবানের বাধার মুখে পড়তে হয়।

দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল টোলো নিউজে কাজ করেন আব্দুল হক ওমর। তিনি আফগান সাংবাদিকদের চিত্র বর্ণনা করে এক টুইট বার্তা দেন।

সেখানে তিনি লিখেন, “গত কয়েক মাস ধরে তোরখাম ও বোলদাক গেটে আফগানদের কষ্ট ও দুর্বিষহ জীবন নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাদের এই জীবন দশার চিত্র ছবি ও ভিডিও আকারে পোস্ট করা হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগের বিষয়ে তালেবান নীরব কেন?‍‍`

আব্দুল হক ওমর আরো অভিযোগ করেন, “এমন দুর্বিষহ চিত্র নথিভুক্ত করতে গিয়ে তালেবানের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এই চিত্র কভার করতে সাংবাদিকদের বাধা দিচ্ছে তালেবান বাহিনী। তালেবানরা বোলদাক ও তোরখামের খারাপ পরিস্থিতি কতদিন লুকিয়ে রাখবে?”

১৯৯০ সালে আফগানিস্তানে প্রথম ক্ষমতা নেয় তালেবান। তখন শিক্ষা বন্ধ করাসহ অনেক বাধ্যবাধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় আফগান নারীদের। ফের গত বছর দেশের ক্ষমতা নেয় তারা। এরপর থেকে একের পর এক নিয়ম চালু করছেন তালেবান প্রশাসন। ফলে দিন দিন দেশে তীব্রভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কঠিন হয়ে পড়েছে সাংবাদিকদের জীবনও।