জ্বালানি নিয়ে ইউরোপের কূটনীতিতে অন্ধকারে পাকিস্তান

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২, ১১:৩২ এএম

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে শাস্তি দিতে রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধের পরিকল্পনা করছে ইউরোপ। আর পশ্চিমাদের সেই কূটনীতির জেরে ভুগতে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ পাকিস্তানকে।

এতে করে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সংকটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের জনগণ, অন্যদিকে নতুন সরকারের নেতৃত্বও হুমকি দিচ্ছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র। 

ঠিক এক দশক আগে বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল দেশ পাকিস্তান তাদের জ্বালানি আমদানি নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ নেয়। তরল প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) ব্যাপক বিনিয়োগ করে তারা।

এলএনজি সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তিতে অংশীদার হয় ইতালি ও কাতারের কোম্পানি। তবে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়ার পরই তারা চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা বন্ধ করে দেয়।

২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত পাকিস্তানে কয়েক দফা এলএনজি চালান দিতে ব্যর্থ হয় তারা। দুই সংস্থাই বলেছে তাদের কাছে পাকিস্তানে সরবরাহ করার মতো এলএনজি নেই।

তবে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, উভয় কোম্পানিই এই সময়ে ইউরোপে এলএনজি সরবরাহ অব্যহত রেখেছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এই এলএনজির দিকে ঝুঁকেছে ইউরোপের দেশগুলো। তাই বেশি লাভের আশায় ইতালি আর কাতারের প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে এলএনজি বিক্রি করছে। আর অতিরিক্ত দামে সেই গ্যাস কিনতে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান।

এই দিকে পাকিস্তান বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে শুরু করে সার কারখানাও এলএনজির ঘাটতির কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গোটা পাকিস্তানজুড়েই ১২-১২ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকছে জনগণ।

তীব্র দাবদাহের মাঝেও অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদার কারণে ফ্যান কিংবা এসি চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন না অনেক এলাকার বাসিন্দারা। ফলে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের শনিবার সরকারি কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা কর্মীদের বাজেটও ৫০ শতাংশ কমিয়ে জ্বালানি খাতে ব্যয় করছে সরকার। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে মোবাইল নেটওয়ার্কও বন্ধ থাকছে বিদ্যুতের অভাবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালানোর জন্য দেশটিতে পর্যাপ্ত তেল নেই।

গত মাসে ঈদের ছুটিতে ব্ল্যাকআউট এড়াতে সরকার এলএনজি চালানের জন্য প্রায় ১০ কোটি ডলার ব্যয় করে। বৈদেশিক রিজার্ভের সংকটে থাকা দেশটির রেকর্ড অংকের বিনিয়োগ ছিল এটি।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে এলএনজির জন্য দেশটির ব্যয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। যদিও জ্বালানি ও বিদ্যুত ভর্তুকি হ্রাসের জন্য দেশটিকে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। তবে এলএনজির সরবরাহ ব্যহত হতে থাকলে হয়তো আগামী মাসগুলোতেও সন্ধ্যার পর অন্ধকারেই থাকবে পাকিস্তানের অনেক জনপদ।