ট্যুর গাইড থেকে ট্যাটু আর্টিস্ট, তাইওয়ানে এখন বেশিরভাগ মানুষ অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যারা জীবনে কখনো বন্দুক হাতে নেননি, তারাও প্রথমবারের মতো অস্ত্র চালানো শিখছেন। এর পেছনে রয়েছে দুই কারণ, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ ও প্রতিবেশী চীনের পক্ষ থেকে হামলার আশঙ্কার ভয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, তাইওয়ানকে ক্রমবর্ধমান সামরিক চাপে রেখেছে চীন, এই দ্বীপটিকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে বেইজিং। ফলে প্রতিরক্ষা বাড়ানো নিয়ে তেইপেইতে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবা প্রসারিত করা হবে কিনা তা বিবেচনা করছে এই দ্বীপ।
তাইওয়ানের যুদ্ধ দক্ষতা প্রশিক্ষণ সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, তিনমাস আগে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে তাইওয়ানের জনগণের মধ্যে অস্ত্র চালানোর আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এয়ারসফ্ট বন্দুক দিয়ে গুলি করা ও কম ক্ষমতা সম্পন্ন ডিভাইস দিয়ে নন-মেটালিক প্রজেক্টাইলে গুলি চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বহু মানুষ। এসব শেখার জন্য আগের চেয়ে চারগুন বুকিং বেড়েছে।
রাজধানী তেইপেইতে অস্ত্র চালানো প্রশিক্ষণ দেয় পোলার লাইট। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ম্যাক্স চিয়াং বলেন, “আগের চেয়ে অধিক সংখ্যক মানুষ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে আসছে। এমন অনেকে আসছেন, যারা পূর্বে কখনো বন্দুক হাতে নেননি। ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এই সংখ্যা তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে।”
চীন সবসময় তাইওয়ানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে শক্তি প্রয়োগ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে। সাম্প্রতিক সময়ে যা আরো বেড়েছে। দ্বীপবাসীরা ভয় পান, চীন যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই শঙ্কা আরো বেড়েছে। কারণ, বেইজিং দাঁড়িয়েছে মস্কোর পাশে, আর তেইপেই দাঁড়িয়েছে কিয়েভের পাশে। যদিও চীন এখন পর্যন্ত সংঘাত চালানোর কোনো রকম বার্তা দেয়নি।
যারা চীনের হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন ৩৯ বছর বয়সী সু চু। তিনি পেশায় ট্যাটু শিল্পী। কীভাবে এয়ার বন্দুক ব্যবহার করতে হয় তা শিখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি।
তিনি বলেন, “যুদ্ধের কিছু দক্ষতা শিখতে চেয়েছিলাম আমি, যেগুলো শুধু বন্দুক ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হতে পারে এমন দক্ষতা। অধিকাংশ মানুষ যুদ্ধে যেতে চায় না, আমিও যুদ্ধে যেতে চাই না। কিন্তু সত্যিই এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটলে আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকব।”
বন্দুক চালানোর পাশাপাশি যুদ্ধের মতো কঠিন সময়ে টিকে থাকার কৌশন শিখতে জনতাকে আহ্ববান জানিয়েছেন তাইওয়ানের কিছু রাজনীতিবিদ। এমন সংকট শুরু হলে বিদ্যুৎ ও পানি ছাড়া কীভাবে থাকা যায় সেসব শিখতে বলছেন তারা।
তাইওয়ানের কাউন্সিলের আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির লিন পিং-ইউ। চীনের সামরিক হুমকি সম্পর্কে একটি বইয়ের লেখকও তিনি। তিনি পরিবারের জন্য বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ইউক্রেন যুদ্ধ দেখে।
তার মতে, “আপনি কীভাবে নিজেকে ও অন্যদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। আমরা প্রচুর ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হারানোর ঝুঁকি, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছু হারানোর ঝুঁকি।”