রাশিয়ার তেলে মূল্য ছাড়, লুফে নিচ্ছে ভারত

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২২, ০৮:১৩ পিএম
ছবি : বিবিসি

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া। দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস তেল রপ্তানিতে এর বেশ প্রভাব পড়েছে। ফলে তেল রপ্তানির নতুন পথ খুঁজছে রাশিয়া। তেলের মূল্যে বেশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। আর এই সুযোগ লুফে নিতে চাচ্ছে ভারত।

কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেল কেনার প্রভাব কী ভারতে পড়বে? আর হঠাৎ রাশিয়ার কাছ থেকে বেশি বেশি করে কেন তেল কিনছে দেশটি? এ নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তেল আমদানি নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন নয়। তবে এই মুহুর্তে কোনভাবেই রাশিয়াকে সমর্থন দেওয়া চায় না মার্কিন প্রশাসন। কারণ রাশিয়াকে যেকোন উপায়ে সমর্থন দেওয়ার মানে ইউক্রেনে তাদের অভিযান সমর্থন দেওয়া। যারা কোনভাবে এখন  মস্কোকে সমর্থন করবে সেটার প্রভাব অবশ্যই পড়বে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।

কাদের কাছ থেকে তেল পায় ভারত?

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেলের প্রয়োজন হয় যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের পরে আছে চীন। অর্থনীতির এই বৃহত্তম দুই দেশের পরেই ভারতের অবস্থান। দেশটি তেলের জন্য বহির্বিশ্বের প্রতি বেশ নির্ভরশীল। ভারতে ব্যবহৃত তেলের ৮০ শতাংশ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। ২০২১ সালে মোট তেল আমদানির মাত্র ২ শতাংশ রাশিয়া থেকে ক্রয় করে ভারত।  যার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর নয়াদিল্লিতে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত ১০টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করেছে। তার মধ্যে ইরাক শীর্ষে। তালিকায় থাকা বাকি ৯টি দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়া, কুয়েত, মেক্সিকো, ওমান, রাশিয়া ও ব্রাজিল।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার কাছ থেকে কোন ধরনের তেল আমদানি করেনি ভারত। তবে মার্চ ও এপ্রিলে ৬০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির জন্য মস্কোর সঙ্গে চুক্তি করেছে নয়াদিল্লি।

রাশিয়ার কাছ থেকে আরও বেশি তেল কিনলেও আন্তর্জাতিক আমদানির তুলনায় খুবই সামান্য বলে দাবি করছে নয়াদিল্লি।

ছবি : বিবিসি

কোন চুক্তিতে রাশিয়ার তেল পাচ্ছে ভারত?

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কঠোর নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে রাশিয়া। এরপরই তাদের অপরিশোধিত উরাল তেলের ক্রেতা কমতে থাকে। এই জ্বালানির দামও কমে গেছে।

কেপলারের বিশ্লেষক ম্যাট স্মিথ বলেন, “উরাল ও ব্রেন্ট তেলের দামের ব্যবধান সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্বাভাবিক সময়ে এই দুই ধরনের অপরিশোধিত তেল একই দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এখন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মূল্যছাড় পেয়ে ভারত ও চীন অন্তত কিছু পরিমাণে হলেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনবে।”

স্মিথ বলেন, “ভারত ঠিক কী পরিমাণে দাম পরিশোধ করছে সে ব্যাপারে আমরা জানতে পারিনি। তবে গত সপ্তাহে অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের তুলনায় রাশিয়ার উরাল তেলে ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৩০ ডলার ছাড় দেওয়া হয়েছে।”

ছবি : বিবিসি

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী?

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার ভয়ে কিছু দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে না। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম দামে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া। তাই লাভের আশায় মার্কিন হুমকি উপেক্ষা করেই দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে ভারত। ছাড়কৃত মূল্যে তেল কিনতে গিয়ে ভারতের বড় তেল শোধন কোম্পানিগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এমন জটিলতায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

ব্লুমবার্গের অর্থনীতি বিশ্লেষকদের হিসাব বলছে, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা রাশিয়ার কাছে প্রায় ৫০ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য পান। এমন অবস্থায় এখন স্থানীয় মুদ্রার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা লেনদেন খুঁজছে ভারত।

আর কোথায় তেল কেনার চেষ্টা করছে ভারত?

রিফিনিটিভের বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, ভারতের তেল আমদানি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এই আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ভবিষ্যতে এ আমদানি স্থায়ী নাও হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র চাইছে নিজেদের তেল রপ্তানি করে রাশিয়ার তেল রপ্তানির বাজারকে দখলে নিতে।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরানের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্য নতুন করে শুরু হতে পারে। নয়াদিল্লির তেল শোধন কোম্পানিগুলো ইরানের কাছ থেকে তেল কিনে নিতে পারে। তবে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত এ বাণিজ্য সম্পর্ক সচল করা সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।