বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব যুক্তরাজ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্যের একদল আইনপ্রণেতা। উদ্বেগ জানিয়ে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে সতর্ক করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যেভাবে প্রতিনিয়ত অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, তাতে যুক্তরাজ্য আরেকটি ‘বৈশ্বিক উত্তেজনায়’ জড়িয়ে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট। যেখানে দ্য অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর দ্য কমনওয়েলথ (এপিপিজি) এর পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে দেওয়া প্রতিবেদনের বর্ণনা উঠে এসেছে। যেখানে যুক্তরাজ্যের আন্তদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ সরকারকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে।
যুক্তরাজ্যের ২০২১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করছে। যা যুক্তরাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ১ শতাংশ। যে কারণে এপিপিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের অস্থিরতার প্রভাব এসে পড়তে পারে যুক্তরাজ্যে।
এপিপিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি নৃশংসতার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানকার বর্তমান সরকার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আইন ও বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করছে তারা। এ ছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি নিয়েও সতর্ক করেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঘটনা প্রভাব ফেলেছে যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর। কারণ, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিউলিপের খালা। আর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নানা।
প্রতিবেদনে উঠে আসা বিষয়গুলো সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কমনওয়েলথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও অংশীজনদের কাছে তুলে ধরা হবে জানিয়েছেন এপিপিজির চেয়ারম্যান কনজারভেটিভ পার্টির নেতা অ্যান্ড্রু রসিনডেল। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যেসব বিষয় প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো ওয়েস্টমিনস্টার ও হোয়াইটহলে গুরুত্বের সঙ্গে শোনা হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার পরও গত আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন অনেকের মনে খুশি ও আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্ত আমরা এমন কিছু ঘটনার প্রমাণ পেয়েছি যেগুলো নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বিগত কয়েক মাসে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিশানা করে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। পাশাপাশি তারা বলেছেন, ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের এখন ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও দৃশ্যমান হওয়ার মতো প্রমাণ আসতে শুরু করেছে।’ সূত্র: প্রথম আলো।