বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানায় সক্ষম আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) হামলা চালাল রাশিয়া। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী দাবি করছে, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে এ হামলা চালানো হয়েছে।
বিমান বাহিনী আরও দাবি করছে, রাশিয়ার আস্ট্রাখান অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের নিপ্রো শহরে ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এরমধ্যে ছিল আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে যেটিকে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়েছে।
সমরবিদরা বলছেন, বিশ্বের ইতিহাসে এর আগে কখনো কোনো যুদ্ধে বা সংঘাতে আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার কোনো নজির নেই। অত্যন্ত দূরপাল্লার এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মূলত পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করে। যা হাজার হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্যই তৈরি করা হয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের নিপ্রো শহরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে রাশিয়া। যদিও কোন ধরনের আইসিবিএম দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বা কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে– সেসম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
[104832]
সম্প্রতি ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অ্যাটাকমস ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে নিক্ষেপের অনুমতি দিয়েছে ওয়াশিংটন। যে কারণে মস্কো এ ধরনের পাল্টা বার্তা দেওয়ার পথে হাঁটতে পারে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার হাতে থাকা আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৬ হাজার ২০০ মাইলের বেশি দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। অর্থাৎ, আস্ট্রাখান অঞ্চল থেকে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লে তা যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে অনায়সে আঘাত করতে সক্ষম। ফলে যদি সত্যিই ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে মস্কো যুক্তরাষ্ট্রকেই এই বার্তাই দিতে চেয়েছে।
কতটা শক্তিশালী এই ক্ষেপণাস্ত্র
১৯৫০ দশকের দিকে যখন স্নায়ুযুদ্ধ তুঙ্গে তখন থেকেই আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়। সে সময় পরস্পরকে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে ধ্বংসের হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন।
মূলত, ব্যালিস্টিক মিসাইলের সর্বনিম্ন পরিসীমা ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহন করার জন্য এসবের নকশা করা হয়েছিল এবং লক্ষ্যমাত্রাও ছিল সীমিত। কেবলমাত্র কোনো বড় শহরের বৃহত্তম লক্ষ্যগুলির বিরুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয়-প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রে নাটকীয়ভাবে উন্নতি করা হয়েছে।
বিশ্বে একমাত্র রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, ভারত, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর কোরিয়াই এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মালিক দেশ। মার্কিন কংগ্রেসের এক গবেষণা অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার কাছে ৩২৬টি আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ রয়েছে।