আর মাত্র চার দিন বাকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের। শেষ মুহূর্তে এসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে মিলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত।
দেশটির বিভিন্ন জরিপ মতে, কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন কমলা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন জয়ের পথে বড় বাধা হতে পারে জো বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের জন্য।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার (৩০ অক্টোবর) গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন নিয়ে একাধিক বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন কমলা। মূলত নির্বাচনী প্রচারে গিয়েই তিনি বিভিন্ন স্থানে তোপের মুখে পড়েন।
বাইডেন প্রশাসনের নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এখনো বাইডেনের সঙ্গেই কাজ করছেন তিনি।
আল-জাজিরার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বার্ষিক ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয় এবং গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে ইসরায়েলকে। চাপের মুখে যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলকে চাপ দেওয়া এবং এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে কাজ করার কথা বললেও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ কিংবা তাদের প্রতি অটল সমর্থন থেকে সরে আসেনি ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জিতবেন অনেক ক্ষেত্রে দেশটির সুইং স্টেটগুলোর ওপর তা নির্ভর করে। এরমধ্যে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রয়েছে মুসলিম ভোটারদের আধিপত্য।
ঐতিহাসিকভাবে এতদিন ডেমোক্র্যাটরাই বেশিরভাগ মুসলিম ভোট পেয়ে এলেও এবারের চিত্র ভিন্ন।
বিশ্লেষকদের মতে, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে বাইডেন প্রশাসনের অন্ধ সমর্থন এবার মুসলিম ভোটারদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে। ইতোমধ্যে কয়েকজন মুসলিম নেতা ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। তবে গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যেও নেতানিয়াহু বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা হ্যারিস।
ফলে আরব এবং মুসলিম আমেরিকানসহ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূল অংশের প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীগুলোও বলছে, তারা হ্যারিসকে তার অবস্থানের জন্য সমর্থন করতে পারেন না।
আনুষ্ঠানিকভাবে বাইডেনের বদলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পরপরই মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার কোনো কারণ দেখেন না তিনি। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে (মেক্সিকো) অভিবাসন নিয়ে আরও কঠোর অবস্থানের পক্ষেও মত দেন তিনি।
ইসরায়েলের প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘অন্ধ সমর্থন’ নীতির পক্ষেই কথা বলেন কমলা। পক্ষান্তরে তিনি জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতি বদলাবেন না।
গাজায় গণ-হত্যামূলক ও নির্বিচার হামলা চালিয়ে অসংখ্য বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যার ফলে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এক মহল থেকে ইসরায়েলকে মার্কিন অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি থাকলেও কমলা এ বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৩ হাজার ১৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখের বেশি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া লেবাননেও প্রায় ৩ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।