সকালে গরম কাপে চুমুক দিতে দিতে সুশান্ত, মুঠোফোনে মেসেজগুলো এক ঝলক দেখে নিল। লকডাউনের আবহে এখন এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মেসেঞ্জারে পরিচিতরা নিয়ম করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায়। সুশান্ত ও প্রত্যুত্তর দিতে দেরি করে না।করোনা আতঙ্কে ঘরের বাইরে বেরোয় না। সময় যাপন করা খুব মুশকিল হয়ে উঠেছিল।মুঠোফোন কেই এখন পরম আত্মীয় মনে হয়। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দেওয়ার সময় হঠাৎ একটি মেসেজে সুশান্ত চমকে উঠল। বার বার বার্তাটি পড়ল। অপর প্রান্ত থেকে যে মেসেজ পাঠিয়েছে তার নাম স্মৃতির আঙিনায় পলি জমে জমে ঢাকা পড়েছিল।সুলগ্নার এই বার্তা দীর্ঘ দিনের পলি সরিয়ে একটু যেন উদ্গীরণ হলো। সুলগ্না লিখেছে— সুপ্রভাত, আশা করি ভালো আছেন। ভেবেছিলাম আপনার সাথে কোনোদিন কথা বলবো না কিন্তু মনকে দমিয়ে রাখতে পারলাম না। আপনি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে সুজাতা কে বিয়ে করেছিলেন। ওর মধ্যেই জীবন খুঁজে পেয়েছেন। অপমানিত হয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করুণ সবসময় আপনার উন্নতি কামনা করেছি। মনকে বুঝিয়েছি ভবিতব্যকে মেনে নেওয়ায় সভ্য। একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সুজাতার জন্য ম্যাচিওর হলো না। তবু দোষ দিই না কাউকেই। আপনার কবিতা আমাকে এখনও টানে।
সুশান্ত দেখে নিল নেট চালু আছে।মুখে সবুজ আলো জ্বলছে। সে ও লিখল— জানতাম, একদিন তুমি ঠিক বুঝতে পারবে। রাগ কমবে। তোমাকে বিয়ে না করার অপারগতা জানবে। তবে এটাও সত্যি দীর্ঘ পনেরো বছরে তুমি আমার কাছে আবছা হয়ে এসেছিলে।মনেও পড়েনি সেইভাবে। অতীতকে একসময় পেছনে ফেলে আসতে হয়। পুরনো প্রেম নিয়ে তো চিরকাল আঁকড়ে থাকা যায় না। শুধু স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে। স্মৃতিরা সময়ের প্রয়োজনে ধূসর হয়ে যায়। তবে তোমার এই বার্তা স্মৃতিকে প্ররোচিত করল। মেসেজ পাঠিয়ে সুশান্তের বুকে শিরশিরানি শুরু হয়েছে। সুলগ্না কথাগুলো হালকাভাবে নিয়েছে।সে ও লিখে পাঠাল— সুজাতাকে নিয়ে আপনি তো বেশ সুখী।
—সুখী হওয়া সহজ কথা নয়। এটাও একটা শিল্প। যা রপ্ত করতে হয়। আদিত্যকে বিয়ে করে তুমি কি সুখী নও?
—হয়তো বা সুখী। আবার সুখী নই। বুঝতে পারি না। আমি তো সাধারণ মেয়ে। সব কিছুকে সহজভাবেই মেনে নিই। তবে আপনার প্রতি এক অমোঘ আর্কষণ অনুভব করি। মনে পড়ে আপনি যখন বোঝাতেন পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে ইলেকট্রন যত দূরে কক্ষপথে বিচরণ করে আর্কষণ বল তত কমে যায়। আমি তখন আপনার আরও কাছে চলে আসতাম। একদিন আপনি আমার হাতে লিখেছিলেন ‘আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই’। আমিও সঙ্গে সঙ্গে লিখে দিয়েছিলাম ‘তুমি রবে নীরবে।’ সত্যিই আপনি আজও আমার মনে নীরবে রয়ে গেলেন ।
সুশান্ত আবেগে আপ্লুত হয়ে লিখল— আমাদের বিয়ে হলে এই প্রেম আর বেঁচে থাকত না। প্রেমকে টিকে রাখার একমাত্র উপায় দূরে থাকা।মেসেজটা পাঠিয়ে সুশান্ত একটু হালকা হলো মনে হচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করল।ঘুরে দেখে সুজাতা। বুক দুরু দুরু করতে লাগল। শিরদাঁড়া বেয়ে যেন রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে গেল। প্রাণপণে তবু সামাল দেওয়ার জন্য বলল—ও তুমি! ওই একটু—
কথাগুলো শেষ করতে না দিয়ে সুজাতা বলল— থাক,আমাকে একটু বুঝতে দাও।
সুশান্তের দু’চোখ বেয়ে কান্না আসছে। সুজাতা কি ক্ষণিকের ভ্রম বলে মেনে নেবে, না এখন থেকে শুরু হলো মনের ভাঙন?