চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে

রাজীব কুমার দাশ প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২২, ০৬:০৮ পিএম

কবির ভাষায় :  “টাকা ও হৃদয় যাকে তাকে যখন তখন দিতে নাই।”

অস্থির চিত্ত একজন সমৃদ্ধ লেখককেও মাটি চাপা দিতে যথেষ্ট। লেখকের হাতে কী নেই? কস্তুরী মৃগ যে প্রকারে নিজের দুর্লভ সুগন্ধি বুঝতে না পেরে নিজেরই সুগন্ধি খোঁজে এদিক ওদিক লাফিয়ে ক্লান্ত মনে একদিন মরে যায়। সে প্রকারে একজন লেখক নিজের যোগ্যতা নিজে বাছবিচার না করে নদীর ওপারে সকল সুখ মনে করে অপরের হৃদয় সমীপে ছোটাছুটি করে নিজের হৃদয়-মন কখনও কারোর হাতে বন্ধক দেন, কখনোবা চিরতরে বিক্রি করে গার্হস্থ্য স্ত্রৈণ নপুংসক মনে নীরবে হারিয়ে যান।

টাকায় লিখা থাকে, “চাহিবামাত্র ইহার বাহক কে দিতে বাধ্য থাকিবে।” এই গূঢ় বাহুল্য তথ্য সমৃদ্ধ বাক্যটির মর্মার্থ চলার পথে যদি অলস বুদ্ধিমান ফকির ডাকাত  ছিনতাইকারী ভণ্ড বাবা  বুঝতে পেরে, চাহিবামাত্র শব্দ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হুমকি দিয়ে টাকাকড়ি চেয়ে  হাইকোর্টের বেঞ্চে নত শিরে করজোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করে রাখার হুমকি  রিটের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে পারতেন; তবে আমার মনে হয়, এই তল্লাটের হাতে গোনা কয়েকজন পবিত্র আদম ছাড়া সবাই প্রকাশ্যে ফকির, চোর ডাকাতের খাতায় নাম লেখাতে বিন্দুবৎ চিন্তা করতেন না।

গবেষক মনে দেখেছি, এ তল্লাটের মানুষ মুখে যাই বলুক না কেন! নিরবচ্ছিন্ন নিরঙ্কুশ মনে সত্য কথা যে বলেন, তা কিন্তু কস্মিনকালেও না। বারমুখো ট্রেনিং পেরিয়ে চিরস্থায়ী মিথ্যার ট্রেন্ড জীবনধারা গড়তে বাচ্চাকাচ্চারা প্রথমে ঘরে ঘরে শিখে নেন। খেতে শুতে গোসলে খেলতে দেখতে শিখে  শতভাগ ভণ্ড মানসিকতা দখলে নেন। পরের ইতিহাস অবশ্য ‘যেমন
কর্ম তেমন ফল’ পেয়েছে অনেকে অনেক করুণ। ঘরে বাইরে ঘাড়ের রোঁয়া ফুলিয়ে সুযোগ বুঝে চরম স্বার্থান্ধ মনে সুবোধ সন্তান পরিবার প্রতিবেশি মাদক বিজ্ঞানী হৃদয় বিজ্ঞানী ধর্ম বিজ্ঞানী সেজে ঘাড় মটকে দেন।

স্বদেশী মাতা পিতা ভাইবোন প্রতিবেশী পরিবার পরিজন মোটামুটিভাবে মিথ্যার বেসাতি মনের জীবনধারা একই রকমের থিতু মনে জীবন কাটিয়ে দেন। যে বলছে সে শতভাগ মিথ্যা মনে বলছে, যে শুনছে সেও সর্বেব মিথ্যাচার মনে শুনছে। তবুও কারোর প্রতি কারোর অনুরাগ বিরাগ নাই। মানে জীবনটা লোকাল ট্রেনের মতো চলছে তো চলছেই। আদালত পাড়া পেরিয়ে বদ্যি
পাড়া, শিক্ষা পাড়া, বিনোদন পাড়া, কসাই পাড়া সকল পাড়াতেই চলছে বেশি কম ভণ্ডামি মিথ্যার প্রতারণ ট্রেন্ড। হাজার লক্ষ পাহাড় সমান সমস্যা, তবুও  এই  জনপদে কেউ সমস্যা মনে করেন না। সবাই জানেন, ও একটা আস্ত চোর ডাকাত জীবনমুখী পণ্য সিণ্ডিকেট মাফিয়া বেধড়ক ঘুষখোর। এই সুরম্য বাড়িটা তুলতে মিনিমাম কোটি পেরিয়ে জোড় সংখ্যা কোটি লেগেছে। সবাই জানেন বোঝেন! কিন্তু সামনে সমীপে বন্দনা করেন। এই বলতে না পারাটাই হচ্ছে জাতীয় ট্রেন্ড মাতৃকোলের বাল্যশিক্ষা।

যেটা সবাই বলি,সেটা কস্মিনকালেও সত্য নয় নীতিতে বিনিময় মাধ্যম টাকায় পর্যন্ত
লিখা দেখতে পাই, ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকার উপদেশ খানি যে সর্বেব কথার কথা, আসল কথা না, তা কিন্তু আমি আপনি তিনি সবাই বুঝি। প্রশ্ন হচ্ছে এই গুহ্য নীতি অন্যদেশের মানুষ কী করে বুঝবেন?

সেই না বোঝার ফাঁদে পড়ে এই দেশের সহজ সরল যুবক যুবতী কিশোরী পেরিয়ে উজানের বর্ষা না বোঝা ঝাঁকে ঝাঁক ইলিশের মতো ধেয়ে আসছে মার্কিন ইংরেজ চায়নিজ ইন্ডিয়ান বহুজাতিক ভালোবাসার মর্দা মাদি ইলিশ।

ইলিশ মৌসুমে মোকাম মোবারক হাতে বিক্রি হয় চড়া মূল্য হাঁকিয়ে। সেইভাবে এই দেশের ভালোবাসার মোকামেও  নিলাম হাঁকিয়ে বিক্রি করে, প্রেম ছলনা ইলিশ জালে আটকে পড়া স্বদেশি বিদেশি ইলিশদের। ওজন, চোখ, নাভি কানে সুস্বাদু ইলিশের কদর বাড়ে। ভালোবাসার ছলনা জালে আটকে পড়া মানুষরূপী ইলিশেরও কদর বাড়ায়, প্রাচুর্য সুনাম বাড়ি গাড়ি ব্যাংক
ব্যালেন্স ফিল্টার চোস্ত ভাষা, বডি ল্যাংগুয়েজ। পেট পচা ইলিশ অবিক্রিত থেকে লবণ মমি হয়। ছলনা হৃদয়ে ভেসে আসা জালে কপর্দকহীন মানুষরূপী ইলিশও ভালোবাসার মোকামে অবিক্রিত থেকে কান্নাকাটি করে। অপাঙক্তেয় ভেসে আসা পচা তিমি অক্টোপাস সমুদ্র অজগর ঘোড়া মাছ তারা মাছ মনে তাড়াতাড়ি প্রেমের বিবর্ণ বালুচরে পুঁতে দিয়ে মহাজন পালিয়ে বেড়ায়।

এই তল্লাটের যে কেউ ইচ্ছে করলে বিয়ে না করেই টাকা থাকলে সারাজীবন বাবা ডাক শুনতে পায়, স্বামী না থেকেও চারিদিকে স্বামীত্বের অধিকার ফলানো যায়, বউ না থেকে ও শত বউয়ের উপরে অধিকার ফলানো যায়, লেখক কবি না হয়েও আকাশে বাতাসে জয়ধ্বনি শোনা যায়।

আমার প্রথম প্রেমিকা গোলাপি এখন যারপরনাই সর্বনাশিনী। ‘সর্বনাশিনী’ নামটা আমার দেওয়া। তার ঝাঁকে ঝাঁক ইলিশ প্রেমিক ধরার গল্পে নাম রেখেছি, ‘সর্বনাশিনী ছলনাময়ী বাঘিনী।’

টাকা ও হৃদয়  যাকে তাকে যখন তখন দিতে নাই।