আসছে পূজা নিয়ে বেড়ানো, ঘুরে বেড়ানো, মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এখন ব্যস্ত অনেকে। কিন্তু ঘুরে তো বেড়াবেন, স্বাস্থ্য নিয়েও তো আপনাকে কিছুটা সচেতন হতে হবে। পথেঘাটে যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে বিপত্তি, হতে পারে স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই যেকোনো সমস্যার মোকাবিলায় তৈরি থাকতে হবে। তাই প্রস্তুত থাকুন। ওষুধ, ফার্স্টএইড বক্স অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। শারীরিক সমস্যা বিবেচনায় সবকিছু সুন্দর করে গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন আনন্দ উপভোগে। পরামর্শ দিচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. অর্পণা দাস।
সঙ্গে রাখুন ফার্স্টএইড বক্স
কী কী রাখবেন ফার্স্টএইড বক্সে? ব্যান্ডেজ, তুলা, বিটাডিনের মতো অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন ও ক্রিম সঙ্গে নিতে হবে। কেটে বা ছড়ে গেলে নিওস্পিরিন জাতীয় পাউডার লাগালে ঝটপট রক্ত বন্ধ হয়, সংক্রমণে ঝুঁকিও থাকে না। চোট লাগলে অ্যানালজেসিক স্প্রে ঝটপট আরাম দিলেও বরফ লাগানো দরকার। তবে বরফ তো আর বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না। আশেপাশের হোটেল বা দোকানে খোঁজ করলেই পাবেন। আর বক্সে ছোট একটা কাঁচি রাখলে ভালো হয়। সঙ্গে এক পাতা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ রাখবেন। চোট লাগলে বা হুটহাট জ্বর, মাথাব্যথায় কাজে লাগবে। একটু তুলা আর ক্রেপ ব্যান্ডেজও রেখে দিতে পারেন ফার্স্ট এইড বক্সে।
অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ নিতে ভুলবেন না
শহর ছেড়ে দূরে যেতে হলে পরিবহনের সময়ে দূষণ পিছু ছাড়ে না। ধূলাবালি আর কালো ধোয়া আপনাকে আক্রমণ করবেই। এতে করে শ্বাসনালী বা ফুসফুসে সমস্যা তৈরি করতে হবে। আবার পূজায় ফুলের বিভিন্ন ব্যাপার থাকে বলে সেগুলোর রেণু থেকে হাঁচি, কাশি বা শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি থাকেই। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা হাঁপানি আছে, তাদের আচমকা অ্যালার্জিক অ্যাটাক হতে পারে। এমনকি অনেক সময় সমুদ্রের পাড়ে গেলে ও নারকেল গাছের ফুলের রেণু থেকে অ্যালার্জির অ্যাটাক হতে পারে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টি অ্যালার্জিক পাওয়াটা মুশকিল। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছু অ্যালার্জির ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
প্রেশার, সুগার ও ইস্কিমিয়া থাকলে
শরীরে অসুখবিসুখ আছে বলে যে ঘরে বসে থাকবেন, কোথাও বের হবেন না, এটা ঠিক নয়। পূজার আনন্দ মাটি করার কোনো মানেই হয় না। বাইরে ঘুরতে যান বা দূরে কোথাও বেড়াতে যান, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে চেকআপ করে নিয়ে তারপর বেড়ানোর চেষ্টা করুন। সঙ্গে নিন প্রয়োজনীয় ওষুধ। আচমকা বুকে ব্যথা করলে সরবিট্রেট জাতীয় ওষুধ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যানিক না করে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে যেতে হবে। আর যাদের সুগার ওঠানামা করে এবং ইনসুলিন ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই সঙ্গে রাখুন চকলেট। আচমকা সুগার ফল করে গেলে চকলেট খেয়ে নিন। বাড়িতে প্রেশার ও সুগার মাপার ইলেকট্রনিক যে মেশিনগুলো পাওয়া যায়, তা সঙ্গে রাখলে ভাল হয়। নিশ্চিন্তে মনের আনন্দে বেড়ান, ভয় পেয়ে মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকবেন না। পূজার দিনগুলো আনন্দে কাটুক, ভালো থাকুন।
ওআরএস বা ‘ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি’ সঙ্গে রাখুন
উৎসব অনুষ্ঠানে বা কোথাও গিয়ে ডায়রিয়া হওয়াটা একটা বিশেষ তাই বাইরে গেলে খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবার পানির ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। খুব বেশি ভাজা বা একেবারে অচেনা খাবার খেয়ে বিপদে পড়বেন না। বিশেষত সঙ্গে যদি বাচ্চা ও বয়স্ক মানুষ থাকেন, পরিচ্ছন্ন রেস্তোরাঁতে খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবুও সমস্যা হতে পারে।
ওষুধের বাক্সে জিঙ্ক ট্যাবলেটের সঙ্গে ওআরএস নিতে ভুলবেন না। পেটে ব্যথার থেকে রেহাই পেতে ডিকলিক জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ডমপেরিডন জাতীয় বমির ওষুধ ও অ্যাসিডিটি প্রতিরোধে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর গ্রুপের ওষুধ সঙ্গে রাখা দরকার। যাদের হাঁপানি বা সিওপিডি আছে, তাদের আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখা একান্ত প্রয়োজন। আর ইনহেলার, রোটাহেলার তো নিতেই হবে। তাৎক্ষনিক কষ্ট কমানোর জন্যে যে ইনহেলহার ব্যবহার করা হয়, তা তো নিতেই হবে, সঙ্গে রাখতে হবে প্রিভেন্টিভ ইনহেলারও।