দাঁত নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ধারণা ও কুসংস্কার রয়েছে। ভুল ধারণার জন্য আর সময়মতো সঠিক চিকিৎসার অভাবে রোগীর জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। আজ রয়েছে দাঁতের তেমন কিছু ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা। কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুমন বণিক।
দাঁতে পোকা হয়
আমরা কেউ কেউ এখনো বিশ্বাস করি, দাঁত ক্ষয় হয়ে দাঁতের ভেতর যে গর্ত তৈরি হয়, তার মধ্যে বড় বড় পোকা থাকে, তাই দাঁত ব্যথা হয়। সেজন্য দাঁতে ব্যথা হলে এখনো অনেকে ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেন। বেদে-বেদেনিরা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বড় বড় পোকা বের করে। কিন্তু আমাদের মুখের ভেতর যে স্বাভাবিক তাপ থাকে অথবা আমরা যে গরম খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করি, তাতে ওই ধরনের পোকার বেঁচে থাকা সম্ভব না। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে তারা পোকা দেখায়? বেদে-বেদেনিরা আগে থেকেই ওসব পোকা বিভিন্ন ময়লা জায়গা থেকে সংগ্রহ করে রাখে। ওইসব পোকাই ঝাড়ফুঁক দেওয়ার সময় অত্যন্ত কৌশলে হাতের কারসাজির মাধ্যমে দাঁত থেকে বের করে। দাঁতে ব্যথা হওয়ার জন্য সাধারণত দুটি কারণ দায়ী। একটি দন্ত মজ্জার প্রদাহ, অন্যটি মাড়ির রোগ। দাঁতের রোগের প্রধান কারণ হলো জীবাণু প্রলেপ। খাদ্যকণা, মুখে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার জীবাণু, মুখের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি থেকে ইপিথেলিয়াল কোষ এবং লালা থেকে মিউসিন ইত্যাদি সংযুক্ত হয়ে জীবাণু প্রলেপ তৈরি হয়। এই প্রলেপ দাঁতের মুকুটে আঠার মতো লেগে থাকে এবং দন্তক্ষয় ও মাড়ি সংক্রান্ত রোগের সৃষ্টি করে। দন্তক্ষয় হলে দাঁতের ভেতর ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়। এ ক্ষয় যখন দন্তমজ্জা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে, তখন দন্তমজ্জায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং দাঁতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া দাঁতের গোঁড়ায় পুঁজ জমে মুখ ফুলে যেতে পারে।
দাঁতের পাথর ফেলে দিলে দাঁতের ক্ষতি হয়
অনেকেরই ধারণা দাঁতে যে পাথর জমে তা ফেলে দিলে দাঁত নড়তে থাকে এবং দাঁতের ক্ষতি হয়। আমরা জানি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন- গলব্লাডার, মূত্রাশয়, কিডনিতে পাথর হয়, তেমনি দাঁতেও পাথর হয়। দাঁতে পাথর জমলে মাড়িকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে ফেলে এবং মারাত্মক মাড়ির রোগ দেখা দেয়। ফলে দাঁতের শিকড় যে অস্থির সাহায্যে চোয়ালের মধ্যে আটকে থাকে তা ক্ষয় হয়ে যায় এবং দাঁত নড়তে থাকে। শেষ পর্যায়ে দাঁত ফেলে দিতে হয়। সুতরাং দাঁতের পাথর দাঁতের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার করে না। তাই পাথর হলে তা অবশ্যই ফেলে দিতে হবে।
টুথব্রাশের চেয়ে নিমের ডাল দিয়ে ব্রাশ করা ভালো
সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও অনেকেই টুথপেস্ট ও ব্রাশ ব্যবহার করেন না, কারণ তাদের ধারণা টুথব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁত ফাক হয়ে যায় এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দাঁতের ফাঁকে যেসব খাদ্যকণা আটকে থাকে এবং দাঁতের এনামেলে যে জীবাণুর প্রলেপ জমে তা পরিষ্কার করা। আর খাদ্যকনা ও জীবাণুর প্রলেপ দূর করার জন্য ব্রাশ ব্যবহারই সবচেয়ে ভালো। নিমের ডাল দাঁতকে ব্রাশের মতো পরিষ্কার করে না।
দাঁত তুলে ফেললে চোখের জ্যোতি কমে যায়
দাঁতের রোগ হলে অনেক ক্ষেত্রেই দাঁত তুলে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। অনেকের ধারণা দাঁত তুললে চোখের জ্যোতি কমে যায়। এ ধারণা একদমই ভুল। কিছু ভালো আপেলের সঙ্গে যদি একটি খারাপ আপেল থাকে তাহলে খারাপ আপেলটি ভালো আপেলগুলোকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। একইভাবে একটি খারাপ দাঁত আশেপাশের ভালো দাঁতগুলোকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। এছাড়া ওই খারাপ দাঁতে অনেক জীবাণু থাকে। এসব জীবাণু শরীরের রক্তের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চিকিৎসক দাঁত তুলে ফেলতে চাইলে চোখের জ্যোতি কমে যাবে এই ভয়ে পিছপা হবেন না। আপনার খারাপ দাঁতটি নির্দ্বিধায় তুলে ফেলুন।