শিশুর বুদ্ধি নির্ভর করে জেনেটিক কারণের ওপর। একই সঙ্গে তাকে অনেকখানি প্রভাবিত করে পরিবেশ এবং পুষ্টি। মূলত মস্তিস্ক তৈরির কাজ শুরু হয় মায়ের গর্ভেই। গর্ভাবস্থা থেকে শুরু হয়ে তা চলতে থাকে শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত। শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তৈরি হয়ে যায় তার ব্রেইনের ৭০%। সুতরাং গর্ভাবস্থাতেই ব্রেইন তৈরির জন্য তাই লক্ষ রাখতে হয় মায়ের খাবারের দিকে। কারণ গর্ভজাত সন্তানকে মা বাড়িয়ে তোলেন তার শরীরের পুষ্টি দিয়ে। খাবার কীভাবে শিশুর বুদ্ধি বাড়ায়, সেই পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল মান্নান।
গর্ভাবস্থায় মাকে বিশেষভাবে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন, মিনারেলস এবং ডিএইচএ খেতে হবে শিশুর ব্রেইনের জন্য। ডিএইচএ যদি মায়ের খাবারে না থাকে তাহলে ব্রেইনের বৃদ্ধি ভালো হয় না। তৈলাক্ত মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ডিএইচএ থাকে। ব্রেইনের বাকি ১৫% বৃদ্ধি হয় জন্মের এক বছর বয়সের মধ্যে। এই সময় মায়ের বুকের দুধ শিশুর বুদ্ধি বিকাশের জন্য খুব জরুরি।
দেখা গেছে, যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ না খেয়ে অন্য দুধ খায়, তাদের চেয়ে যারা মায়ের বুকের দুধ খায় তাদের আইকিউ সাত থেকে দশ গুণ বেশি হয়। কারণ বুকের দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ডিএইচএ থাকে, যা মস্তিস্ক গঠনে সাহায্য করে। বুকের দুধে যে প্রোটিন থাকে তা থেকে বিভিন্ন নিউরো হরমোন বা নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সাহায্য করে। শরীরের এক স্নায়ুকোষ থেকে অন্য স্নায়ুকোষে সংবাদ বহন করে নিয়ে যায় নিউরোট্রান্সমিটার।
কোলিন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই কোলিন যেমন মায়ের বুকের দুধ থেকে আসে তেমনি ডিমের কুসুম, বাদাম, মেটে এবং মাংসেও পাওয়া যায়। ব্রেইনের বাকি ১০% তৈরি হয় জন্মের তিন বছর বয়স পর্যন্ত। তাই এই সময় বুদ্ধি বাড়াতে পরিমাণমতো প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলস দিতে হয় শিশুর খাবারে।
ব্রেইনের চালিকাশক্তি হচ্ছে প্রোটিন। ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড ব্রেইন তৈরির জন্য প্রয়োজন হয়। বাঙালিরা যেসব খাবার খায় তাতে ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড মোটামুটিভাবে পেয়েই যায়। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাধারণত পাওয়া যায় ফল এবং শাক-সবজি থেকে। তাই সুস্থ-সবল ও মেধাবী প্রজন্মের লক্ষে গর্ভাবস্থায় মাকে এবং শিশুর তিন বছর বয়স পর্যন্ত তাকে সঠিক খাবার দিন, ওর বুদ্ধির বিকাশে অবদান রাখুন।