চিকিৎসকের পরামর্শ

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ হলে কী করবেন?

নাইস নূর প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২, ০১:০৪ পিএম

গর্ভাবস্থায় নারীদের নানা শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এরমধ্যে অন্যতম একটি। গর্ভবতী নারীর স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারির থেকে বেড়ে যেতে পারে। এটাই উচ্চ রক্তচাপ। যার কারণে নানা জটিলতাও হয়। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। প্রয়োজন তাই সচেতনতা।

গর্ভাবস্থায় নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার নানা বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ-কে জানিয়েছেন রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা: আরমানা জেবিন কান্তা।

ডা: আরমানা জেবিন কান্তা বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় দেহের মধ্যে একটি নতুন জীবনের সঞ্চার, বৃদ্ধি, বিকাশের সহিত সমন্বয় সাধনের জন্য নানাবিধ হরমোনের পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনও হয়। শরীরে রক্তের পরিমান বেড়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে রক্তচাপ্ও পরিবর্তিত হয়ে থাকে।“

“তাই ভ্রুনের সুস্বাস্থ্যের জন্য পুরো গর্ভাবস্থায় গর্ভবর্তী মায়ের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’   

ডা: আরমানা জেবিন কান্তা আরও বলেন, “গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু কারণে রক্তপ্রবাহের মাত্রা বিঘ্নিত হতে পারে। যেমন মানসিক চাপ, বয়স বা কঠোর ক্রিয়াকিলাপ।“

ডা: আরমানা জেবিন কান্তার পরামর্শে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের কারণ, স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও প্রতিকার এসব নিয়েই বিস্তারিত থাকছে সংবাদ প্রকাশ-এর আজকের আয়োজনে। 

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

গর্ভাবস্থার শুরুতে যেকোনও নারীর দেহে বিভিন্ন হরমোন এবং শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলো সংঘটিত হয়।

সাধারণত ধমনীর মধ্য দিয়ে একটি নির্দিষ্ট হারে রক্ত প্রবাহিত হয়। তবে গর্ভাবস্থার সময় দেহের দ্রুত পরিবর্তনের জন্য এই স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহের হার বিঘ্নিত হয়ে স্বাভাবিকের তুলনায় উচ্চ মাত্রায় ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়ে উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়ে উঠে।

বংশগত জীন  

সাধারণত বংশগত জীনের কারণে গর্ভাবস্থায়  উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। যেসব নারীর বাবা-মা বা ভাই-বোনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ লক্ষণ থাকে তাদের গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ হ্ওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদিও গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সঠিক কারণটি এখনো অজানা। তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ তো আছেই। 

সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস, নিস্ক্রিয় জীবনধারা, স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, মদ্যপান, প্রথমবার গর্ভাবস্থা, উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের পারিবারিক ইতিহাস, ৩৫ বছরের বেশি অথবা ২০ বছরের কমে গর্ভধারণ। 

যমজ বা একাধিক সন্তান গর্ভধারন,গর্ভাবস্থার পূর্বে উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস, আইভিএফের মাধ্যমে গর্ভধারণ। 

 

গর্ভাবস্থাকালীন উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ

২০ তম সপ্তাহের মধ্যেই যদি রোগীর রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর বেশি হয় এবং তা যদি শিশু জন্মের আগে ভালো হয়ে যায় তবে সেটা Gestational hypertension।

Pre-ectampsia

গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পরে যদি রোগীর রক্তচাপ ১৪০/৯০ এবং সঙ্গে প্রসাবের মধ্যে প্রোটিন পা্ওয়া যায় তাহলে সেটি Pre-ectampsia। অন্যদিকে, ২০ সপ্তাহ পরে রোগীর রক্তচাপ ১৪০/৯০ এবং সেই সঙ্গে খিঁচুনি ও প্রসাবে প্রোটিন পা্ওয়া যায় সেটি হলো Eclampsia।

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ এবং উপসর্গ 

হাত বা পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, দৃষ্টিশক্তিতে পরিবর্তন, মাথা ধরা, বমি করা, প্রসাবের পরিমাণ কমে যা্ওয়া, বিরক্তি এবং খিটখিটে মেজাজ, পেটে ব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট।

জটিলতা

উচ্চ রক্তচাপের কারণে Plaunta বিছিন্নকরন, Plaunta তে রক্তপ্রবাহ হ্রাস হতে পারে। কিডনি, লিভার, চোখ ও হার্টের ক্ষতিসহ ভ্রুনের বৃদ্ধি হ্রাস এবং ভবিষ্যতে হৃদরোগ হ্ওয়ার ঝুঁকিও থাকে। 

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপে চিকিৎসা ও প্রতিকার  

গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা ও প্রতিকার  নিয়ে ডা: আরমানা জেবিন কান্তা বলেন, “এসব রোগীদের জীবনযাত্রার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সুষম আহার গ্রহণ করা, লবণ গ্রহণের পরিমানকে হ্রাস করা, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত প্রসব পূর্ববর্তী চেকআপগুলো করাতে হবে। ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন করা যাবে না। সেই সঙ্গে মানসিক চাপও কমাতে হবে।