বর্ষার মৌসুম শুরু হতেই ঘরে ঘরে হঠাৎ জ্বর। সেই সঙ্গে হচ্ছে সর্দি-কাশিও। বৃষ্টিতে ভিজে কারও জ্বর, সর্দি হচ্ছে। কারও হচ্ছে ঘরে বসেই। বিশেষজ্ঞরা জানান, জ্বর কোনো রোগ হয়, বরং এটি অন্য রোগের উপসর্গ। মানে শরীরে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলেই তা জ্বরের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ডেঙ্গু, টাইফয়েড, করোনাভাইরাসজনিত এমন রোগগুলো জ্বরের মাধ্যমেই বোঝা যায়। তবে ভাইরাস জ্বরগুলো নিজে থেকেই কমে যায়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জ্বরগুলো সহজে কমে না। তাই এই সময় জ্বর হলে ঘরে বসে না থেকে দ্রুত ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
হঠাৎ জ্বরের কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কারও শরীরের প্রচণ্ড ব্যথাও হচ্ছে। সর্দি-কাশি, কফ হচ্ছে। জ্বরের ওষুধ খেলে কিছুক্ষণ কমছে। এরপর ওষুধের প্রভাব কমে গেলেই জ্বর আবারও উঠছে। এই অবস্থায় জ্বরকে অবহেলা করা একদমই ঠিক নয়। জ্বর হলে এই সময় যে বিষয়গুলো মানতে তার সাধারণ কিছু ধারণা থাকছে এই আয়োজনে।
বিশেষজ্ঞরা জ্বর নিয়ে সাধারণ কিছু তথ্য দিয়েছেন :
এই সময়ের ভাইরাস জ্বর ৩ থেকে ৫ দিন থাকতে পারে। টানা ১০২/১০৩°f আসতে পারে এবং কমলে ১০১- এর নিচে না-ও নামতে পারে। জ্বর হলেই সঙ্গে সঙ্গেই কেন নামছে না, তা নিয়ে অস্থির হওয়া যাবে না।
এক দিনে জ্বর কমবে না। ভাইরাস জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজে লাগবে না। কোনো ইনফেকশন থাকলে তা ৩ দিন পর প্রকাশ পায়। ইনফেকশন থেকে জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
জ্বর হলে খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি চলে আসে। এই অরুচি এক দিনে কাটবে না। তাই এই সময় অল্প অল্প করে পানি পান করুন। তরল খাবার খান। গরম স্যুপ, লেবুর শরবত খেতে হবে।
বাচ্চাদের জ্বর হলে মুখে একদমই খেতে না পারলে, পেশাব কমে গেলে এবং বমি বন্ধ না হলে বা খিচুনি হলে হাসপাতালে নিয়ে যান।
জ্বর ১০০ থেকে ১০২° হলে গা মুছে দিন। মুখে ওষুধ খাওয়াবেন। বাচ্চাদের জ্বরের সিরাপ দিন। অন্তত ৪-৬ ঘণ্টা পর পর সিরাপ খাওয়ান। সাপোসিটারি দিতে হলে অন্তত ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
বেশ জ্বর অর্থাৎ ১০২° F এর ওউপরে গেলে তাড়াতাড়ি জ্বর কমানোর জন্য বড়রাও সাপোসিটার ব্যবহার করতে পারেন। এতে জ্বর সাময়িকভাবে কমে আসতে পারে। তবে পুরোপুরি যাবে না। অন্তত ৩ দিন জ্বর থাকবে।
বড়রা একটি সাপোসিটারি দেওয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যে আরেকটা দিতে পারবেন না।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জ্বরের ওষুধ বেশি খাওয়ালেই তা সেরে যাবে কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক দিলে জ্বর ভালো হবে তা নয়। ভাইরাসের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে জ্বর কত দিন থাকবে।
জ্বর হলে ভেজা সুতি কাপড় দিয়ে বারবার গা মুছে দিন। গরম ও নরম খাবার খাওয়ান। পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হবে। কোনো কাজ করা যাবে না।
যেকোনো অসুস্থতায় ঘুম প্রয়োজন। ভালো ঘুম হলে শরীরের দুর্বলতা কাটে। ঘুমের মধ্যে জ্বর থাকলেও রোগীকে জাগিয়ে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর দরকার নেই।
জ্বরের ওষুধ খাওয়ানোর আগে থার্মোমিটার দিয়ে মেপে নিন। জ্বর ১০০ বা বেশি হলেই জ্বরের ওষুধ খাওয়ান। গায়ে হাত দিয়ে গরম লাগা, জ্বর ৯৮, ৯৯° ; জ্বরের আগে শীত শীতভাব, অস্থির লাগলেই ওষুধ খাবেন না।
জ্বর হলে বাচ্চাদের বমি হতে পারে। জ্বরের ওষুধেও বাচ্চাদের বমি হয়। এ ক্ষেত্রে বমির ওষুধ লাগবে না। প্রয়োজনে ওষুধ পাল্টে নিন। বাচ্চারা ওষুধ খাওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে বমি করলে আবারও একটু ওষুধ খাওয়াতে পারেন।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার খাবেন ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন।
করোনার প্রকোপ বাড়ছে, ডেঙ্গু ও টাইফয়েডের প্রবণতাও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে জ্বর ভালো না হলে বিশেষজ্ঞ দেখান। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে ওষুধ খান।