বিশ্বজুড়ে আবারও দেখা দিয়েছে ভাইরাসবাহী রোগের আতঙ্ক। এবারের আতঙ্কের নাম মাঙ্কিপক্স। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ ইতোমধ্যে ১২টি দেশে এই রোগের সন্ধান মিলেছে। ভাইরাসবাহী এই রোগ দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। তাই বাংলাদেশসহ কিছু দেশে এখনই জারি হয়েছে সতর্কতা।
১৯৫৮ সালে বানরের দেহে এই রোগ প্রথম শনাক্ত হয়। তাই এর নামকরণ হয় মাঙ্কিপক্স। ১৯৭০ সালে আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে মানবদেহে ধরা পড়ে এই রোগ। ধীরে ধীরে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে এর সংক্রমণ দেখা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভবিষ্যতে এই রোগ মহামারি আকার ধারণ করতে পারে, যদি সচেতনতা এখনই বাড়ানো না হয়।
মাঙ্কিপক্স বিরল একটি রোগ। মানুষের কাছে এটি স্বল্প পরিচিত। মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস থেকেই এর সংক্রমণ বাড়ে। এটি স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির রোগ। মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রধান দুটি ধরন—পশ্চিম আফ্রিকান ও মধ্য আফ্রিকান। এটি ক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট অঞ্চলের কাছাকাছি মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অংশে বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স এখন পর্যন্ত কম গুরুতর। এর সংক্রমণের সক্ষমতা তুলনামূলক কম।
এই রোগের লক্ষণ অনেকটাই চিকেনপক্স বা জলবসন্তের মতো। সাধারণত একপর্যায়ে নিজে থেকেই এই সংক্রমণ কেটে যায়। এই রোগের সংক্রমণের সক্ষমতা তুলনামূলক কম হওয়ায় ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যেই রোগীর রোগমুক্তি সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়াতে পারে। ত্বক, শ্বাসনালি, চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়া সংক্রমিত বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল এবং ভাইরাসযুক্ত বস্তুর সংস্পর্শে এলেও আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে। এদিকে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যৌন মিলনের সময় সরাসরি সংস্পর্শে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।
পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাঙ্কিপক্স কখনো গুরুতর হয়ে উঠে, যা মৃত্যুও ঘটায়। তবে সম্প্রতি সংক্রমণের ঘটনায় এখনো এই রোগে কারও প্রাণ যায়নি। তাই মাঙ্কিপক্সকে প্রাণঘাতী বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবু সবাইকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্তের টিকা ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে বলে প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। আগাম সতর্কতা হিসেবে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ গুটিবসন্তের টিকা কিনছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হলে দ্রুত চিকিৎসককে দেখাতে হবে। তবে এই রোগ সম্পর্কে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়ার আগেই অবগত করতে হবে। কারণ এই রোগ সংক্রমিত। একজন থেকে অন্যজনের শরীরে সহজেই সংক্রমিত হয়।
এছাড়া এই রোগ প্রতিরোধের কৌশলগুলো হলো- সংক্রামিত প্রাণীর সংস্পর্শ হ্রাস করা, হাতের পরিচ্ছন্নতা, কম রান্না করা মাংস খাবেন না, ভাইরাসের জন্য ইতিবাচক রোগীদের সংক্রামিত উপাদান বেডিং এবং লিনেন কাপড়ের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে সংক্রামিত বা পজিটিভ রোগীদের যত্ন নেওয়ার সময় পিপিই ব্যবহার করতে হবে।