অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে সন্তান প্রসব, পুরো সময়ের অনুভূতিটা থাকে আনন্দের। শরীরে কষ্ট থাকলেও মনের মধ্যে আনন্দ ঘুরপাক খায়। শুরু হয় নানা প্রস্তুতি। নানা প্রশ্নও মনে ভিড় করে। কীভাবে সন্তানের যত্ন নিতে হবে, কীভাবে স্তন্যপান করাতে হবে, কীভাবে সন্তানের খাওয়া-দাওয়ার সমন্বয় করতে হয়—এমন নানা প্রশ্ন থাকে নতুন মায়ের।
৩ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ। সপ্তাহজুড়ে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা নবজাতক শিশুকে স্তন্যপান করানোসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনা গড়ে তোলায় ওপর জোর দেন।
স্বাস্থ্যবিদদের মতে, কিছু নিয়ম মেনে নবজাতক শিশুকে স্তন্যপান করালে মাকে দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না। সেই সঙ্গে নবাগত সন্তানও পরিপূর্ণ পুষ্টি পায়। বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহে নতুন মায়েদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ থাকছে এই আয়োজনে।
শিশু জন্মের পর মা ও শিশু দুইজনই যদি সুস্থ থাকেন তবে তখন থেকেই স্তন্যপান করাবেন ৷
সন্তান প্রসবের পর মায়ের স্তনে হলুদ কলোস্ট্রাম ক্ষরণ হয় ৷ জন্মের পর নবজাতকের জন্য এটি সর্বোচ্চ পুষ্টিকর খাবার। যা শিশুর জন্য় খুবই প্রয়োজনীয়৷ পুষ্টিমূল্যে ভরপুর এই কলোস্ট্রাম নবজাতককে অবশ্যই পান করান ৷
নবজাতককে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর স্তন্য়পানের চেষ্টা করুন৷ সন্তানের জন্য ‘এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং’ রুটিন করে নিন। এই রুটিনে শিশু জন্মের পর থেকে পরবর্তী ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুই ব্রেস্টমিল্ক পান করাবেন।
শিশুকে স্তন্যপান করানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিলে ভালো হয়। এতে স্তন্যপান করানোর সময় ক্লান্তিভাব থাকে না। শিশুও পর্যাপ্ত দুধের জোগান পায়।
শিশুকে স্তন্যপান করানোর সময় চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। চারপাশে কোলাহল থাকলে কোনো এক কোণে গিয়ে স্তন্যপান করাতে পারেন।
শিশুকে সময় ধরে স্তন্যপান করানো ভালো। মানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে স্তন্যপান করাবেন। শিশু কান্নাকাটি না করলেও নির্দিষ্ট সময়েই স্তন্যপান করান।
শিশুর খুব ক্ষুধা পেলে কান্না করে। জিভ বার করে নিজের ঠোঁট চাটতে থাকে, কখনো কখনো আঙুল চুষে খায়। এগুলো দেখলেই বুঝে নেবেন শিশুর খুব ক্ষুধা পেয়েছে। তখনই তাকে স্তন্য়পান করাবেন। তবে অল্প ক্ষুধায় শিশু তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেয় না। সে ক্ষেত্রেও সময় অনুযায়ী স্তন্য়পান করান। বেশি ক্ষুধা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না।
স্তন্য়পানের আগে অবশ্যই শিশুর ডায়াপার পাল্টে নিন। এতে অস্বস্তিবোধ হবে না।
প্রতিবার শিশুকে স্তন্যপান করানোর আগে ও পরে পরিষ্কার ভিজে কাপড়ের টুকরো দিয়ে স্তনবৃন্ত পরিষ্কার করে নেবেন।
শিশুকে স্তন্যপান করানো আগে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। ফলের রসও খেতে পারেন। কারণ, মায়ের শরীরে ফ্লুইডের ভারসাম্য সামঞ্জস্যপূ্র্ণ হতে হয়। না হলে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবে ৷
স্তন্যপানের সময় মায়ের খাওয়া-দাওয়ার দিকে যত্নশীল হতে হয় ৷ প্রতিদিনের ডায়েটে প্রোটিন ও ভিটামিনের সামঞ্জস্য করুন ৷ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারও অবশ্যই খাবেন।
অভিজ্ঞ কারও কাছে শিখে নিন স্তন্য়পানের সময় শিশুকে কীভাবে কোলে শোয়াবেন। কীভাবে শিশুকে ধরে রাখবেন। স্তন্য়পানের সময় সঠিক ভঙ্গিমায় না থাকলে মা ও সন্তানের অসুবিধে হয়।
শিশুকে স্তন্য়পান বেশ ধৈর্যের কাজ। অনেক মা এই কাজটি কষ্ট মনে করেন। এতে শিশুরা সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। পাশাপাশি মায়েদেরও বেশ কিছু সমস্যা হয়। মনে রাখবেন, নবজাতকের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য় স্তন্যপান অত্যন্ত জরুরি।