৭ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘Our Planet, our Health.’ যার অর্থ ‘সুরক্ষিত বিশ্ব, নিশ্চিত স্বাস্থ্য’। বিশ্বকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা আর সর্বজনীন স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতেই বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
মানুষের জীবনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য, শারীরিক স্বাস্থ্য সব দিকেই যত্নবান হতে হয়। একজন সুস্থ মানুষ সুস্থ জীবন পায়। সুস্থ পরিবেশই সুস্থতা নিশ্চিত করে। আশপাশের পরিবেশ সুস্থ থাকলে জীবনমানও ভালো হয়। স্বাস্থ্য দিবসে প্রতিপাদ্যের আলোকে এই বক্তব্যই উঠে এসেছে।
শরীর, মন সুস্থ রাখতে নিজেদের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। রাষ্ট্র ও পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। সুস্থতা নির্ভর করে আবহাওয়া, পরিবেশ, খাওয়া-দাওয়া, জীবনযাত্রার মান ও অভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চার ওপর। নিয়মিত যোগব্যায়াম করে, হাঁটাহাঁটি করে, খাদ্যতালিকার শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
শরীর ও মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর বাইরেও কিছু বিষয় রয়েছে, যা আমাদের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। যে অভ্যাসে বা কাজে আপনি আনন্দ পাবেন। সুস্থ থাকবে মন। সুস্থ থাকবে শরীর। সহজ যে কাজগুলো শরীর ও মনের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখবে তা জানাব এই আয়োজনে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রথম শর্ত সুষম খাবার। ভালো খাবার দেহে পুষ্টি জোগাবে। সুস্থতা নিশ্চিত করবে। তাই কী খাবেন আর কী খাবেন না, তা আগে জেনে রাখুন। লন্ডন কিংস কলেজের গবেষণা ফেলো ড. মেগান রসি জানান, সবজি ও ফল খেলে সুস্থ থাকা যাবে। তবে একই রকমের নয়, বিভিন্ন জাতের ভিন্ন সবজি আর ফল খেতে হবে। প্রতি সপ্তাহে ভিন্ন ৩০ পদের সবজি ও ফল খাওয়া গেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। লতাপাতা ও উদ্ভিজ্জ সবজি খাওয়া আরও বেশি উপকারী।
নানা জটিলতায় আঁকড়ে ধরলে জীবনে হাসিখুশি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি বেশি হাসিখুশি থাকেন, তার জীবন তত সুন্দর হয়। প্রতিদিন নানা চিন্তায় মগ্ন রয়েছেন কিংবা স্বাস্থ্যের জটিলতায় প্রায়ই মন খারাপ হয়ে থাকে অনেকের। সবকিছুর ভিড়েও হাসতে হবে বেশি বেশি। প্রতিদিন প্রতি বেলায় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। আবার হাসিকে নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গেও যুক্ত করতে পারেন। মনে রাখবেন, হাসি মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়, যা শরীরের অনেক রোগের নিরাময় হতে পারে।
মনের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিন
ব্যস্ততার ভিড়ে হয়তো নিজের জন্য় সময়ই বের করা হয় না, তাই না। আবার অন্যকে খুশি রাখতে গিয়ে নিজের কথা ভুলেই যাচ্ছেন। সবকিছুর মাঝেও নিজের মনের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিন। যে কাজ করতে ইচ্ছা হচ্ছে বা হচ্ছে না, কোথাও যেতে ইচ্ছা হচ্ছে বা হচ্ছে না—এমন যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রে দ্বিধায় না থেকে নিজের মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন। কিন্তু ব্রিটেনের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ও এক্সারসাইজ-বিষয়ক শিক্ষক ড. নেডাইন স্যামি বলেছেন, আত্মসচেতনতা বাড়িয়ে মনের ওপরে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো সম্ভব। আত্মসচেতনতা নিজের আবেগ, অনুভূতি ও ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গভীরভাবে চিনতে সহায়তা করে। নিজের দুর্বলতাগুলোকে কাটিয়ে ওঠা সহজ হয়।
বাড়িতে একটি পোষা প্রাণী রাখতে পারেন। এটি আপনার শরীর ও মনের যত্ন নেবে। কীভাবে? সারা দিনের ব্যস্ততায় শরীরচর্চার সময় পান না, দৌড়ানোর সময়ও হয় না। পোষা প্রাণী থাকলে আপনার কায়িক পরিশ্রম হয়ে যাবে। এবারিস্টউইথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. রিস থেচার বলেন, জিম হয়তো সুস্থতার ভালো সমাধান, কিন্তু তা সবার জন্য সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ভালো উপায় পোষা প্রাণী। দিনে তার জন্য ছোটাছুটি করলেই রোজকার ব্যায়াম হয়ে যাবে। শরীর ও মন ভালো থাকবে।
ঘুম মানুষের দেহঘড়ি ঠিক রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম হতে পারে স্বাস্থ্য সুরক্ষার চাবিকাঠি। পরিণত বয়সীরা রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাবেন। ঘুম পর্যাপ্ত না হলে শরীর ঠিকমতো কাজ করে না। মনের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এক্সেটার ইউনিভার্সিটির স্পোর্ট অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক ড. গেভিন বাকিংহাম বলেন, “ঘুম কম হলে মানুষের কগনিটিভ ফাংশন বা নতুন জিনিস শেখার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে। মানুষ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মানসিক স্বাস্থ্যে জটিলতা শুরু হয়, যা কাজের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। তাই ঘুম হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম মূল মন্ত্র। তবে অতিরিক্ত ঘুমও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। ঘুম হতে হবে পর্যাপ্ত। বেশিও নয়, আবার কমও নয়।