নব্বই দশকে ঢালিউডে কাজ করেছেন টলিউডের একাধিক অভিনয়শিল্পী। সেখানকার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত তো এ দেশের ঘরের নায়িকা হয়ে গিয়েছিলেন। এখানকার ছবিতে অভিনয় করেই নিজের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। এছাড়া টলিউড সুপারস্টার প্রসেনজিৎও এদেশের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।
তবে গেল কয়েক বছর ধরে টলিউডে বাংলাদেশি অভিনয়শিল্পীরা দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের ভেতর জয়া আহসান সবার থেকে এগিয়ে। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আবর্ত’ সিনেমা দিয়ে টালিউডে যাত্রা শুরু হয়েছিল জয়ার। এরপর জয়া অভিনীত মুক্তি পাওয়া সিনেমার মধ্যে রয়েছে রাজকাহিনী, ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’ ও ‘বিনিসুতোয়’। এ ছাড়া জয়ার গোটা তিনেক সিনেমা এখনও মুক্তির অপেক্ষায়।
এর বাইরে সম্প্রতি টলিউডে পা রেখেছেন আজমেরি হক বাঁধন ও রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। বাঁধন অভিনীত ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে পরপর ‘মায়া’ ও ‘অ্যা রিভার ইন হেভেন’ নামের দুই সিনেমায় যুক্ত হয়ে বেশ পাকাপোক্তভাবেই টালিউডে নাম লিখিয়েছেন মিথিলা। নুসরাত ফারয়া ও বিদ্যা সিনহা মিমও সেখানকার ছবিতে অভিনয় করেছেন।
এপার বাংলার অভিনেত্রীদের ওপার বাংলায় কাজ নিয়ে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে সেখানকার অভিনেত্রীদের। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের অভিনেত্রীদের সুযোগ করে দেওয়ায় চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তাদের ভেতর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়িকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।”
জয়া আহসান অবশ্য এই প্রতিযোগিতা নিয়ে ভাবতে চান না। তার মতে, কাজের সুযোগ সবারই আছে। আনন্দ প্লাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালোই। আমার মতে শিল্পের কোনো সীমারেখা থাকা উচিত নয়।”
এদিকে দুই বাংলার শিল্পের আদান-প্রদানের ওপরে জোর দিলেন মিথিলা। মিথিলা বলেন, “কেউ কারও কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারে বলে মনে হয় না। সবাই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন। আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় থাকছি, তাই এখানেই কাজ করছি এখন। তবে আমি এখানে সদ্য কাজ শুরু করেছি। আমাকে বোধহয় কারও প্রতিযোগী হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না।”
সেই সঙ্গে মিথিলা মনে করিয়ে দিলেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকেই বাংলাদেশে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশের সিনেমা কমান্ডোতে কাজ করেছেন দেব। আবার কলকাতায় গিয়ে একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বাংলাদেশের নুসরাত ফারিয়া।
বাংলাদেশে কাজ করেছেন টালিউডের এমন এক নায়িকা বলেন, “এখানে বাংলাদেশের শিল্পীরা যত সুযোগ পান, সেই তুলনায় বাংলাদেশে আমাদের কাজের সুযোগ বেশ কম।”
এসব নিয়ে বাঁধন মনে করেন, এই চর্চাগুলো অভিনেত্রীদের ওপরে বাড়তি চাপ তৈরি করে। তিনি বলেন, “অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টালিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে নারীদের ওপরেই বেশি চাপ তৈরি করা হয়। কেন এই চাপগুলো আমাদের নিতে হবে? এগুলো এড়িয়ে ভালো দিকগুলো ভাবলে, সবারই ভালো হবে। সবাই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। কথাটা কলকাতা-বাংলাদেশ সব ইন্ডাস্ট্রির নিরিখেই বলছি।”
টলিউড অভিনেত্রীদের এই চাপা ক্ষোভের কারণে সেখানে এদেশের শিল্পীদের সুযোগ কমে আসবে কি না—সেটা সময় বলে দেবে। তবে এই ক্ষোভ যে সহজে মিটবে না সেটা সহজেই অনুমেয়।