লকডাউনে বিনোদন: টেলিভিশন, মোবাইলে বেড়েছে আসক্তি

সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২১, ০২:৫৯ পিএম

দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে সারা দেশে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না। কার্যত মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছে। এই ঘরবন্দি সময়ে বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে টেলিভিশন ও অনলাইন। তবে টেলিভিশনের চেয়ে বিভিন্ন ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নাটক আর ওয়েব কনটেন্ট দেখার প্রতি ঝোঁক বেড়ে চলেছে। দিনের বেশির ভাগ সময় পর্দায় চোখ রেখে কেটে যায়।

এমন কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে সংবাদ প্রকাশের কথা হয়েছে লকডাউনে যাদের নাটক, ওয়েব কনটেন্টের প্রতি আসক্তি বেড়েছে। তারা সবাই বলছেন, অবসর সময় কাটাতেই এসব দেখছেন। তবে লকডাউন খুলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না বলে মনে করছেন তারা।

মানুষের এই গৃহবন্দি সময়টাকে ‘পুঁজি’ করে একের পর এক কনটেন্ট প্রকাশ করছে ইউটিউব চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাকিব আর খান বলেন, “লকডাউনে মানুষ ঘরেই সময় কাটাচ্ছে। ঘরের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ। তাই অনলাইন কনটেন্টের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। হইচই চেষ্টা করছে দেশের দর্শকদের জন্য ভালো ভালো কনটেন্ট প্রোভাইড করতে, যেন ঠিকঠাক বিনোদন পায়।”

বাংলাভিশনের অনুষ্ঠানপ্রধান তারেক আখন্দ বলেন, “টেলিভিশন বিনোদনের সব থেকে বড় মাধ্যম। এর বাইরে এখন ইউটিউব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানেই দর্শক বেশি নাটক দেখেন এখন। তাই বলে টেলিভিশনের আবেদন কমবে না। বাংলাভিশন সব সময় রুচিশীল বিনোদন পরিবেশন করে থাকে। লকডাউনের কথা বিবেচনা করে শুরু থেকেই রুচিশীল নাটক, টেলিছবি প্রচার করে আসছে। পরে সেগুলো ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়। আমরা দুই মাধ্যমের দর্শকই ধরতে চাই।”

টেলিভিশন, মোবাইল কিংবা কম্পিউটার-ল্যাপটপের পর্দায় সারাক্ষণ চোখ থাকলে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. আশরাফুল হক বলেন, “সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের রেটিনার ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে। ফলে চোখের পানি শুকিয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে।”

আশরাফুল হক আরও জানান, বেশি সময় টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার প্রভৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে, তার থেকে বের হওয়া আলো মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে ঘুম আসতে চায় না। বিশেষ করে রাতে টিভি দেখার কারণে অনিয়মিত ঘুম চক্রের মধ্যে পড়তে হয়।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (এনআইএমএইচ) পরিচালক অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “সারাক্ষণ ডিজিটাল দুনিয়ায় পড়ে থাকলে অমনোযোগ থেকে শুরু করে এডিএইচডি বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার নামে মানসিক সমস্যা হতেই পারে। বাড়তে পারে ওজন। পরিশ্রমের প্রতি বাড়তে পারে অনীহা।”

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে। মানুষের জীবনযাত্রা আগের মতো হয়ে গেলে। পেশাদার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে পর্দার প্রতি আগ্রহ কমতে শুরু করবে।