‘এই সংসারের হাল ধরার জন্য কাইয়ুম যেমনে কষ্ট করত, এখনো মনে উঠলে কষ্টে বুকটা ফাঁইটা যায়। আমার বাবা (কাইয়ুম) সংসারের হাল ধরার লাইগা কুমিল্লায় থাকত তিন দিন, সাভারে থাকত তিন দিন। সাভারে থাইকা টিউশনি করছে, কোচিং চালাইছে, টুকিটাকি ব্যবসা করছে। আর যাতায়াত করত এখান থেইকা যে ডিমের গাড়ি, সবজির গাড়ি যাইতো সেগুলো দিয়া। দুই-তিনশ টাকা বাঁচানোর জন্য এত কষ্ট করত! এগুলো মনে উঠলেই এখনো কান্না আসে।‘ –এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহিদ আব্দুল কাইয়ুমের মা কুলসুম।
কাইয়ুম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সাভারের নিউমার্কেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল কাইয়ুম। তারপরের দিন সাভারে এনাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
কাইয়ুম সাভারের সিআরপি হাসপাতালের পাশের ডগরমুড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ কফিল উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কাইয়ুম ছিলেন মেজ।
বৃদ্ধ বাবা আর বড় ভাইয়ের আয়ের কোনো উৎস না থাকায় নিজেই টিউশনি আর সাভারে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে সংসারের হাল ধরেন আব্দুল কাইয়ুম। এখন তার অনুপস্থিতিতে দিশাহারা কাইয়ুমের পরিবার।
আব্দুল কাইয়ুমের মা বলেন, “কাইয়ুম না থাকাতে একটু কষ্ট করে চলতাছি। কি বলব, বলার কিছুই নাই আমার। এখন উপায় না দেইখা তার বাবা গাড়ি চালাইতেছে। তার ওপর কানেও একটু কম শোনে। এখন কখন কী করে চলব আল্লাহ ভালো জানে। বড় ছেলেও একটা জায়গাতেই চাকরি করত, ওইটাও এখন নাই।”
আব্দুল কাইয়ুমের সহপাঠী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “কাইয়ুম অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন। সবসময়ই দেখি তাকে জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত। কারও কিছু হলে সবার আগে ছুটে যেত। আপ্রাণ চেষ্টা করত উপকার করার। সে তার পরিবারের জন্য কী করত তা খুব কাছ থেকে দেখেছি। আজ আমার বন্ধুটি নেই এক মাস হলো, তার হাসি মাখা মুখ আর আমরা দেখব না। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমাদের সুখ কেড়ে নিয়েছে আব্দুল কাইয়ুমের মৃত্যু।“
কুবির একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন বলেন, “আমরা বিভাগ এবং ক্লাবের পক্ষ থেকে কাইয়ুমের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও আমরা আর্থিক সহযোগিতা সংগ্রহ করছি। পাশাপাশি তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আর্থিক সহযোগিতা সংগ্রহ করছে। আশা করি খুব দ্রুত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পারব।”