ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এমন দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া পোস্টে ছেয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত (এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে, নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফেইবুক গ্রুপ এবং পেইজে পোস্ট দিয়ে এমন দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের ব্যাচভিত্তিক বিবৃতি দিয়েও এমন দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে তা কার্যকর করার দাবি জানানো হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, “‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার মুক্তির ৯ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এই দাবির সঙ্গে সংহতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে অনতিবিলম্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক একটি ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে। ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক-দলভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া পোস্ট ও বিবৃতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, “কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত হলে তাকে বিভাগ থেকে বয়কট করা হবে। কোনো বিভাগীয় কার্যক্রমে সে অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং তার সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষায় বসবে না।”
মো. শামছ্ হাসান সাজিদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবসময়ই অভিশাপ হিসেবেই ধরা দিয়েছে। এর কারণে আমরা অনেক ছাত্রের জীবন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে দেখেছি। রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে এসব ছাত্ররাজনীতি বজায় রেখেছে এবং নিজ স্বার্থ হাসিলে ছাত্রদের ব্যবহার করে যাচ্ছে। যার ফলে ছাত্ররা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। আমরা দেখেছি, ছাত্র রাজনীতি ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, মারামারি, খুন, টেন্ডার বাণিজ্য এবং মাদক বাণিজ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে। আমরা নিকট অতীতে দেখেছি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ) সাধারণ ছাত্রদের ওপরে নৃশংস উপায়ে হামলা করেছে, আগ্নেয়াস্ত্রসহ আক্রমণ করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। অতীতে ছাত্রদলসহ অন্যান্য দলও এমন করেছে। ছাত্ররাজনীতি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্যান্সার, যা ক্ষতি ছাড়া কোনো ধরনের উন্নতি করে নাই। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে।”
সামিয়া নুসরাত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “লেজুড়বৃত্তিক এবং দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। যার উদাহরণ আমরা বছরের পর বছর ধরেই দেখে এসেছি। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হয়। কিছুদিন আগেও আমাদের ছাত্র আন্দোলনেও নৃশংস হামলার করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। অতীতে ছাত্রদল, শিবিরও এমন কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। তাই আমরা ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে। যেখানে সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতির চর্চা হবে। কোনো দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে জায়গা পাবে না।”
মেহেদী হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “দলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই, তারা কখনোই ছাত্রদের জন্য কাজ করেনি। তারা কখনো ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বও করেনি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করে গিয়েছে বরাবরই। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সব ধরনের কাজে তারা লিপ্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের হয়রানি, ক্যাম্পাসে মারামারি, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তারা কাজ সফলভাবে করেছে। শিক্ষার্থীদের কাজ করার জন্য যে প্রতিনিধি প্রয়োজন সেটা কার্যকর ছাত্র সংসদের মাধ্যমেই সম্ভব। শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং সেই প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে। অনতিবিলম্বে এটার বাস্তবায়ন করতে হবে।”