এক পশলা বৃষ্টির আদরমাখা স্পর্শে জেগে উঠেছে বৃক্ষমালা। গাছে গাছে হরেক রকমের ফুল ফসরা সাজিয়ে রেখেছে। মনে হয় প্রকৃতির এক নিপুণ সৃষ্টিকর্ম। বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কথা। প্রকৃতির রুক্ষতাকে কাটিয়ে নবপল্লব রাশিতে সেজে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে পা রাখলেই মনে হবে, এ যেন এক স্বর্গরাজ্য। মনের অজান্তে চোখ দুটি চলে যাবে রাস্তার দু-ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোর দিকে। কারণ, সে গাছেই ঝাঁকে ঝাঁকে, স্তবকে স্তবকে, ফুটে আছে হরেক রকমের ফুল। কোনো ফুল শ্বেত, কোনোটা রক্তমাখা, আবার কোনটা হলুদ। কোথাও মৌমাছি, কোথাও ভ্রমর বাসা বেঁধেছে। বাতাসের সঙ্গে মনমাতানো ফুলের সুরভিতে ছন্দময় হয়ে উঠেছে জাবির আকাশ-বাতাস।
চারদিকে সবুজের সমারোহ। যেন গ্রীষ্মের এ গরমে সবুজ তারুণ্যে জেগে উঠেছে জাবির প্রতিটি অঙ্গন। প্রাণ জুড়ানো এ দৃশ্য দেখে যে কেউ থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।
গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, রাধাচূড়া, ক্যাসিয়া রেনিজারাসহ নানা ফুল। বাহারি এ ফুলের সৌন্দর্যে আর মিষ্টি সুবাস লালন করছে এখন লাল মৃত্তিকার প্রকৃতিতে। তার সঙ্গে মৌসুমি ফল আম-কাঠাল, নানা জাতের পাখি, বিভিন্ন রকমের প্রজাপতি। এতে ক্যাম্পাসে যেন প্রকৃতি তার সব সৌন্দর্যই উজাড় করে দিয়েছে।
মূল ফটক পেরিয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে দেখা মিলে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, কনকচূড়া, রাধাচূড়া ফুলের পসরা।
এছাড়া মুন্নী সরণি, চৌরঙ্গী, শেখ হাসিনা হল ও বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনের সড়কসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি আনাচে-কানাচে উকি দেয় হরেক রকমের ফুল।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইজারল্যান্ড, শান্তিনিকেতন এলাকা ও মওলানা ভাসানী হলসংলগ্ন পুকুর পাড়ে বেগুনি শোভা ছড়াচ্ছে জারুল। পাশাপাশি সোনালু নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশের প্রতিযোগিতায় মেতেছে।
সাভার এলাকা থেকে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রাতিকা বলেন, “প্রকৃতি আমার কাছে ভালো লাগে। তাই ছুটির দিনে মা-বাবাকে নিয়ে ঘুরতে আসি।”
ফুলের সুবাসে মুখরিত ক্যাম্পাসের মুগ্ধতায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, “চারদিক ফুল আর ফুল। ফুল কে না পছন্দ করে। ক্যাম্পাসে এলেই যেন মন ভরে যায়। এর মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ক্যাম্পাসে বেশ ভালো সময় কাটে আমাদের।”
প্রকৃতির টানে ব্যস্ত সময়ে একটু অবসরের প্রয়োজনে বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই ঘুরতে আসেন এই ক্যাম্পাসে। যেখানে প্রকৃতির মধ্যে যুক্ত হয়েছে এই ফুলের বাগান। এর মধ্যে নিজেকে ক্যামেরায় বন্দি না করলে চলেই না। চারদিক থেকে ভেসে আসে ক্যামেরার ক্লিক-ক্লিক শব্দ।
কেউ ব্যস্ত সেলফি তোলায়, আবার কেউ ব্যস্ত বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে ছবি তুলতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুল দেখতে স্বজনদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস।