শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে কাজ করছে ইবির সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো

জুয়েল রানা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৩, ০১:৩২ পিএম
প্রতীকী ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, আবৃত্তি-আবৃত্তি, চলচ্চিত্র সংসদ, লণ্ঠন, বুনন এবং সাহিত্য সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানামুখী কার্যক্রমে সমৃদ্ধ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এতে শিক্ষার্থীরা মনস্তাত্ত্বিক ভাবে যেমন বিকশিত ও সমৃদ্ধ হচ্ছেন তেমনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাখতে পারছেন অসামান্য অবদান। বিভিন্ন সময় সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের উদ্যোগে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নিজেদের মেধা-মনন বিকাশে এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় প্রথিতযশা হয়ে উঠছেন। এসব সাংস্কৃতিক সংগঠনের কোনোটি কাজ করছে সাহিত্য চর্চায়, কোনোটি মেধা-মননের বিকাশে, কোনোটি বা নাট্যশিল্পে, আবৃত্তি এবং চলচ্চিত্রে।

বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার
ইবির সাংস্কৃতিক সংগঠনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, যার প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯১ সালের ১০ অক্টোবর। শিহাব শাহীনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার এখানকার একমাত্র নাট্য সংগঠন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে  মঞ্চ নাটক, পথনাটক ও শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বিভিন্ন থিয়েটার, শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং টেলিভিশনে নিয়মিত কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে সংগঠনটি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার মঞ্চ নাটক-ডাকঘর, পথ নাটক- একটি অবাস্তব গল্প, জুতা আবিষ্কার, অরুণোদয়ের পথে, দ্যা আর্ট ফিল্ম অব ভাঙা কলসি এবং শর্ট ফিল্ম - ‘যে গল্পের শেষ নেই’ প্রদর্শন করেছে।

আবৃত্তি আবৃত্তি
‘আসুন আমরা শুদ্ধতার চর্চা করি’ এই স্লোগানে ২০০৩ সালের ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ‘আবৃত্তি আবৃত্তি’। সংগঠনটি বর্তমানে ২১ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ‘আবৃত্তি আবৃত্তি’ বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি কর্মীদের অনুদানে পরিচালিত এ সংগঠনটি বাংলা সংস্কৃতি ও কবিতা নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ভালো সংগঠক তৈরি করার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রচেষ্টা এবং শুদ্ধতাকে সমাজের সকল জায়গায় পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে এটি। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিজেদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পেয়েছে আবৃত্তি আবৃত্তির সদস্যরা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ(ইবিচস)
২০১০ সালের ৪ এপ্রিল হতে একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ এর নিবন্ধিত ও ইউনিভার্সিটি ফিল্ম সোসাইটি এলায়েন্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী ও কর্মশালার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। ‘মানবতার সেবায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী’ শিরোনামে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয়ের সাহায্যার্থে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘চ্যারিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ প্রদর্শন। ২০১৭ সালের ৭ মে পরিসংখ্যান বিভাগের এক সহকারী অধ্যাপকের চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহের জন্য ‍‍`চ্যারিটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল‍‍` এর আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩০টি দেশের প্রায় দুই হাজারের ততোধিক চলচ্চিত্র সংরক্ষণের মাধ্যমে ইবিচস সংসদ একটি ফিল্ম আর্কাইভ গড়ে তুলেছে।

লণ্ঠন
‘মেধা ও মননে প্রগতিশীল বাংলাদেশ’-স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ধারা অক্ষুন্ন রাখতে প্রতিষ্ঠিত হয় লণ্ঠন। শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ও ক্যারিয়ার গঠনে সহযোগী হিসেবে সভা-সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিহাসের চর্চা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন দিবসে আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতা, উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে স্কলারশিপ বিষয়ে পরামর্শ প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে সংগঠনটি।

‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে জানো’ শিরোনামে কুইজ, ‘প্রযুক্তির দীপ শিখা’ শিরোনামে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, ‘আমার কন্ঠে আমার ভাষা’ শিরোনামে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উদ্দেশ্যে পত্র লিখন, পঠন ও প্রেরণসহ এরকম অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি। 

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করে সংগঠনটি।

বুনন
২০১৬ সালে কয়েকজন প্রতিভাবান বুননশিল্পীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘বুনন’। আলপনা, ডেকোরেশন ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মতো কাজগুলো করে থাকে এ সংগঠন, যা থেকে প্রাপ্ত অর্থের পুরোটাই সেবামূলককাজে ব্যয় করে সংগঠনটি। ২১শে ফ্রেবুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলপনা করার কাজটিও এই সংগঠন করেছিল।

সাহিত্য সংসদ
‘চিন্তা ও চর্চায় বুদ্ধি মুক্তি হোক সাহিত্যে’ এই স্লোগানে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর যাত্রা শুরু করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদ’। বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের চর্চা ও যুক্তিনির্ভর মননই এই সংসদের মূল লক্ষ্য। বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান চর্চায় সাহিত্য সংসদ সাপ্তাহিক পাঠচক্র করে থাকে যা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। এর অর্ন্তভুক্ত বিষয়সমূহ হলো সাহিত্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাস, বিশ্বসাহিত্য ও সমকালীন প্রেক্ষাপট। অন্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক পাঠক তৈরিতে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি এবং জ্ঞান অন্বেষণে কৌতূহলী করা, দেয়ালিকা প্রকাশ, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ। সেমিনার, লেখালেখি-বিষয়ক ও লিডারশীপ কর্মশালা ছাড়াও সাহিত্য সংসদের নিজস্ব লাইব্রেরি পরিচালনা করে সংগঠনটি।

এ পর্যন্ত সংসদটি ’স্বপ্ন’ ও ‘শব্দতট’ নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের লেখা ছাপানো হয়েছে। এছাড়াও বুক রিভিউয়ের প্রতিযোগিতা ও বইমেলার আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি।

এসব সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের জোট ‘ঐক্যমঞ্চ’র আহ্বায়ক ইয়াসিরুল কবির সৌরভ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জোট ঐক্যমঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন সমূহের স্বার্থরক্ষা, সার্বিক বিকাশ সাধন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সৃজনশীল, মননশীল, মানবিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে সংস্কৃতি চর্চা, নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত করে একজন দক্ষ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সংগঠনগুলোর ভূমিকা অন্যতম। এছাড়াও ঐক্যমঞ্চের নেতৃত্বে বইমেলা, বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি আদায়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে কাজ করছে ঐক্যমঞ্চের অধীনে থাকা সংগঠনসমূহ। নানা প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে অব্যাহত রাখায় ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’