জবির নতুন ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রাচীর

এক বছরের প্রকল্প সম্পন্ন হয়নি দুই বছরেও

সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৮:৫৩ এএম
  • জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজে ধীরগতি
  • দুই বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৬৬ শতাংশ
  • ব্যয় বাড়ানোর সুপারিশ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
  • ভবন নির্মাণের টেন্ডার না পাওয়ায় কাজে গতি নেই

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ এবং উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ২০১৮ সালে। এর তিন বছর পর প্রায় ৫ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চুক্তির কয়েক দিন পর থেকেই শুরু হয় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ মাত্র এক বছর হলেও এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে দুই বছর। প্রকল্পের মেয়াদের দ্বিগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নানা জটিলতায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে অন্যান্য প্রকল্পের কাজও। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নতুন ক্যাম্পাস পেতে অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের তেঘোরিয়া ইউনিয়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে মুজাহিদনগরের প্রবেশমুখে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় এবং সরকারি গাছ কাটা সংক্রান্ত জটিলতায় এখনও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের প্রাথমিক কাজও শুরু করতে পারেনি। একই অবস্থা ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশেও। পদ্ম সেতু রেললাইনের পাশের এই জায়গায় অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা ও বড় বড় পুকুর থাকায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজও শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উত্তর পাশে মুজাহিদ নগরে প্রবেশের শুরুতেও শেষ হয়নি প্রাথমিক কাজ। পশ্চিম পাশে অধিকাংশ জায়গায় কাজ শেষ হলেও রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় সিসি স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হলেও এখনো ইট গাঁথুনির কাজ শেষ হয়নি।

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, পৌনে পাঁচ হাজার মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য ৩০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল এক বছর। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি হওয়ায় এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্প দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ এই সময়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে আছে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অন্যান্য কাজও। সীমানাপ্রাচীরের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় মাটি ভরাট, প্রকৌশল ভবন নির্মাণসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের কাজও শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বারবার চিঠি দিলেও কাজে কোনো গতি আসছে না। এতে নতুন ক্যাম্পাস পেতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের তথ্যমতে, এক বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের দীর্ঘ দুই বছরে মাত্র ৬৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি এর পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি। কাজে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ জটিলতার অজুহাত দিলেও তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিগ্রহণ জটিলতায় ছিল মাত্র ১১ একর জমি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই বছরে বাকি জায়গার কাজও শেষ করতে পারেনি।

এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্ল্যানিং ভবন নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার না পাওয়ায় ক্ষোভে ধীরগতিতে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইঞ্জিনিয়ারিং ভবনের টেন্ডার পেতে চুক্তির কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু করলেও টেন্ডার না পাওয়ায় পরে কাজের গতি কমিয়ে দেয় ঠিকাদার। এতে এক বছরের প্রকল্পে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অগ্রগতি নেই।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি সময় লাগায় এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করার কথা ভাবছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে চুক্তির নিয়মানুযায়ী এক বছর মেয়াদি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম গ্রুপের ঠিকাদার আনোয়ার ব্যাপারী বলেন, “সীমানাপ্রাচীরের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ। মুজাহিদ নগর পাশে কিছু এবং রেললাইনের পাশে এক হাজার ফুটসহ আর মাত্র সাড়ে চার হাজার ফিট বাকি আছে। জমি অধিগ্রহণের কিছু সমস্যা থাকায় আমাদের কাজে দেরি হচ্ছে। অধিগ্রহণ শেষ হলেই মোটামুটি তিন থেকে চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কাজে দেরি হওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ব্যয় বাড়ানোর জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১১ একর জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা ছিল, সে কারণে সেসব জায়গায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকায় অন্যান্য জায়গায়ও তারা কাজ করেনি। এ জন্য আরও দেরি হয়েছে। অধিগ্রহণের ঝামেলা শেষের পথে, আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সীমানাপ্রাচীরের কাজ শেষ করতে পারব।”

প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, “নিয়মানুযায়ী এই প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই ব্যয় বাড়াবে না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, “আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দিয়ে আসছি। ঠিকাদারকে ডেকে পাঠাব। তারা যাতে দ্রুত কাজ শেষ করে সে জন্য তাদের সাথে কথা বলব।”