দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার গণখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেছেন, “দেশের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে সরকারকে বড় বড় বিনিয়োগে সহযোগিতা করতে হবে।”
শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে ‘৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন-প্রত্যাশা-চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, “জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের প্রাইভেট সেক্টরগুলোকেও সাহায্য করা প্রয়োজন, যাতে উৎপাদনশীল কাজে তারা বড় বড় বিনিয়োগ করতে পারে। যদি আমরা সরকারকে বড় বড় বিনিয়োগে সহযোগিতা করতে পারি তাহলে আমাদের মোট উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশ সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে।”
সামষ্টিক আয়ের প্রবৃদ্ধি যদি চমৎকার হয়, তার সামাজিক প্রবৃদ্ধি চিত্তাকর্ষক উল্লেখ ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ গণখাতে বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় শিক্ষাখাতে বাজেটে শতকরা ২২ ভাগ বরাদ্দ ছিল। এটা এখন অনেক কমেছে। এখন অন্যান্য খাতে বরাদ্দ দিতে হয়। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর আগে পূর্ববাংলার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাইনাস ১২ ভাগ। এখন মাথাপিছু জিএনআই ১০০ ডলার। আর মোট সামষ্টিক আয় ৯০০ কোটি ডলার। আগে ১ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো, এখন ৪ কোটি টন খাদ্য উৎপাদন হয়। জমি প্রায় ২০ ভাগ কমে গেছে। তখন আমাদের গড় আয়ু ছিল ৪৩ বছর। এখন গড় আয়ু ৭৩ বছর। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে।”
শিক্ষার হার নিয়ে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। তবে শিক্ষার মান নিয়ে যে প্রশ্ন আছে তা অস্বীকার করার কিছুই নাই।”
রপ্তানি নিয়ে তিনি বলেন, “আগে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭০০ মিলিয়ন ডলার। এখন রপ্তানি হয় ৫২ মিলিয়ন ডলার। তখন বৈষম্যের সূচক ছিল ০.৩, এখন হয়েছে ০.৪। এই একটা ব্যাপারে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের আয় ও সম্পদ তুলনামূলকভাবে একটুখানি সহনীয় পর্যায়ে আছে। এতে আত্মপ্রসাদের কোনো অবকাশ নেই।”
সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনতাহা রাকিবের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়া সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক দিলারা রহমান এবং ভোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন।
দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৮টি দেশের শতাধিক গবেষণাপত্র ১৪টি স্বশরীর সেশনে এবং ২টি ভার্চুয়াল সেশনে উপস্থাপিত হবে। এছাড়া সম্মেলনে দেশ-বিদেশের আড়াই শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা অংশ নিচ্ছেন।
গত ৫০ বছরের বাংলাদেশের অর্থনীতি, আর্থ সামজিক উন্নয়ন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে সংস্কার, প্রযুক্তি ও উন্নয়ন, সংস্কৃতি বিনিময়, চ্যালেঞ্জ, ভাষা ও সাহিত্য, দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতি, কোভিড-১৯, দারিদ্র্যতা, লিঙ্গ বৈষম্য, টেকসই উন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে গবেষকেরা প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।