নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জনজীবনে এক ছাপ ফেলেছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হাওয়া লেগেছে। অধিকাংশ খাবারের ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকা বৃদ্ধি পেলেও খাবারের পরিমাণ ও মান দুটোই কমেছে, বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ক্যান্টিন, দোকানসহ ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকানগুলোতে অধিকাংশ খাবারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, “এখানে আমাদের করার কিছু নেই। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া নিজেরা বেশি টাকা জিনিসপত্র কিনে কম টাকাতে খাওয়াতে পারি না। আমাদেরও তো চলতে হয়।”
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলগুলোতে খাবার প্রতি ৫-১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুরগির মাংস যেখানে ৩৫-৪০ টাকায় পাওয়া যেত, সেখানে এখন তা ৫০ টাকা করা হয়েছে। ৩০-৩৫ টাকার মাছের পিস এখন নেওয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। গরুর মাংস ৪৫-৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। ডিম-ভাত পাওয়া যেত ২৫-৩০ টাকায় এখন সেটি ৩৫-৪০ টাকা। এছাড়া অনেক খাবারেই তুলনামূলক দাম বেশি রাখতে দেখা গেছে।
খাবারের দাম বাড়ায় মাসিক খরচও আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার দা সূর্য সেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানী। তিনি জানান, যেখানে দৈনিক ১০০ টাকা হলে মোটামুটি তিন বেলার খাবার খাওয়া হয়ে যেত। সেখানে এখন ১২০-১৩০ টাকা খরচ হয়। যার কারণে অনেক হিসেব করে চলতে হচ্ছে এ সময়ে।
এদিকে খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে অনেকে খাবার খাওয়া কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, বর্তমানে দুবেলা খেয়ে যে পরিমাণ খরচ হয়, তা আগের তিনবেলা খাবারের সমান হয়ে গেছে।
ক্যান্টিন মালিকরা বলছেন, এই দামে এর চেয়ে ভালো মানের খাবার দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের নিজেদেরও সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক পরিচয়ে বিনা টাকায় খাওয়া (ফাও খাওয়া) বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এদিকে খাবারের মান ও পরিমাণও যথেষ্ট কমেছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। গেল শুক্রবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি কবি জসীমউদ্দিন হলের ক্যান্টিনে ভাতে পোকা, তরকারিতে মুরগির পালক থাকার অভিযোগে হলের ক্যান্টিনে তালা লাগিয়ে দেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
কবি জসীম উদ্দীন হল প্রাধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “খাবারগুলো শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। অপরাধীকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নিশ্চিতে হল প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। আমরা ইতোমধ্যে ওই ক্যান্টিন বন্ধ করে দিয়েছি, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যান্টিন বন্ধ থাকবে।”
এদিকে হল প্রশাসন বলছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সবারই একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে এ সংকট সাময়িক। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ চিত্রে পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা তাদের। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই খাবারের মান ও দামের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।