শোক দিবস নয়, রাজনৈতিক ব্যানারই আপত্তি : বুয়েট শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২, ০৮:০০ পিএম

জাতীয় শোক দিবসের বিরোধিতা কিংবা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ক্যাম্পাসে শোক দিবস পালন করা যাবে না- এমন কোনো আপত্তি নয় বরং ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছাত্র রাজনীতির দলীয় ব্যানারে সভা নিয়ে আপত্তি ছিল।

রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরে বুয়েটের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন মন্তবা করেন শিক্ষার্থীরা।

‘ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত শোক সভার প্রতিবাদে হওয়া শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জোর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বজনীন। তার চেতনা ধারণ করতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের পরিচয় ধারণের প্রয়োজন পড়ে না। ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে। তার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা সমৃদ্ধিময় সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সদা প্রস্তুত।”

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের ব্যানার দেখে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অবহিত করে এবং কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে। সেমিনার কক্ষে ছাত্রলীগের সাবেকদের অনুষ্ঠান যথারীতি সমাপ্ত হয় এবং শিক্ষার্থীরা সেখানে কোনোরূপ বাধা প্রদান করেনি। ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করার অনুমতি প্রদান করায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করাই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাদের কর্মসূচিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপপ্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, “এসব অপপ্রচার শিক্ষার্থীদের ভীত, সন্ত্রস্ত এবং একইসঙ্গে ব্যথিত করছে। আজকে আমরা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করতে চাই, আমাদের শনিবারের (১৩ আগস্ট) কর্মসূচি কোনোভাবেই ক্যাম্পাসে আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানবিরোধী ছিল না। বরং বিশ্ববিদ্যালয় কেন এরকম অনুষ্ঠানের অনুমতি দিলো আমরা সেটার জবাবদিহিতা চেয়েছি প্রশাসনের কাছে।”

বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় দিবস সমূহের অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে উল্লেখ করে তারা বলেন, “সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকাল পাঁচটায় বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে শনিবার উপাচার্য মহোদয় বরাবর লিখিত আবেদনপত্রে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া-মাহফিল আয়োজনের অনুমতি প্রার্থনা করা হয়েছে।”

ওই অনুষ্ঠানে বুয়েটের সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, বুয়েটের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ ছাড়াও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাদর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তারা এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় বুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শনিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় ছাত্রলীগের ব্যানারে আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে বুয়েট ছাত্রলীগের একদল সাবেক নেতৃবৃন্দ। আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। সেই সূত্র ধরে ছাত্রলীগের এই কর্মসূচির প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এসময় বিক্ষোভকারীরা ‘আবরারের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিবো না, রাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে কর্তৃপক্ষের নিরবতার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সুষ্ঠু ব্যখ্যা চেয়ে তারা বুয়েট উপাচার্য বরাবর একটি দরখাস্ত পেশ করেন তারা।