গলায় ছুরি ঠেকিয়ে রাবি ছাত্রলীগ নেতার চাঁদাবাজি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২২, ০২:৫৬ পিএম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের (স্নাতক সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোকে জিম্মি করে চাঁদা আদায় করেন বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলফাত জেমস, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম ও আইবিএ ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা, তামিম ও রাজ নামের ছাত্রলীগ কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে জিম্মি ভুক্তভোগী হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওকিবুল হক। এছাড়া তার বন্ধু ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অংকুর পাল ও ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির বিজনেস ম্যানেজমেন্টের জুনায়েদ ইফতি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীরা ময়মনসিংহ থেকে ৭টি বাসে করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে আসেন। একই জেলা থেকে রাবির জিয়া হলের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রাকিবও বাস নিয়ে আসেন। ভুক্তভোগী চবি শিক্ষার্থীর জন্য লাভ কম হয় রাকিবের। তাই তিনি ছাত্রলীগ নেতা জেমসের মাধ্যমে চবি শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর বন্ধু অংকুর পাল বলেন, “আমরা ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে থাকি। যথারীতি রাবির ২৫ তারিখের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ থেকে ভোর ৫টায় এই ক্যাম্পাসে আমাদের বাস নিয়ে আসি। দুপুরের পর ড্রাইভাররা আমাদের ফোন দিয়ে বলে কিছু লোক তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। তাদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদার বিষয়টি জানান ড্রাইভাররা। আমি তাওকিবুল ও ইফতি ঘটনাস্থলে আসি। ভিড়ের কারণে আমাদের দেরি হয়। ইফতি আগে পৌঁছে গেলে তাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে যায়। টিচার্স কোয়াটারের পেছনে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আমরা বিভিন্নভাবে আমাদের বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। পরে অভিযুক্তরা আমার বন্ধুর নম্বর থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। পরে তারা বিকাশে আমাদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। আমরা সরাসরি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেই এবং পুলিশকে বিষয়টি জানাই। তামিম নামে একজনকে তারা আমাদের নিকট টাকা নিতে পাঠায়। পরে ভিসির বাস ভবনের সামনে থেকে তামিমকে পুলিশ আটক করে। এরপর বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেমসের নেতৃত্বে তাওকিবুলের বিকাশ নগদ থেকে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে পিন আদায় করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। তারা আরও টাকা নেয়ার জন্য আমাদের চাপ দিতে থাকে। এ ঘটনায় পুলিশকে আমরা পাইনি এবং অভিযুক্ত কাউকে আটক করেনি। এরপর আমি ও ইফতি চলে আসি। তাওকিবুলকে মীমাংসার জন্য তারা রেখে দেয়।”

ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে অংকুর বলেন, “এমন ঘটনায় আমরা রীতিমতো হতাশ। রাবি ছাত্রলীগ নেতারা এমন আচরণ করবে আমরা কল্পনাও করিনি। আমি নিজেও ছাত্রলীগ করি এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও সবাই ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এমন চাঁদাবাজি সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জার।”

অভিযুক্ত রাবি ছাত্রলীগ নেতা আলফাত সায়েম জেমসের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে আরেক অভিযুক্ত জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। পরে বিষয়টি শুনেছি এবং আমার স্কুলের ছোট ভাই জেনে ফয়সাল আহমেদ রুনু ভাইকে নিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছি।”

টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিবুল বলেন, “আমরা তার টাকা ফেরত দিয়েছি। আপনি ভুক্তভোগীর নিকট খোঁজ নিলেই সত্যতা পাবেন।”

জেমসসহ ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক  ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। শুনেছি জিয়া হলের রাকিবের স্কুলের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে একটি ঝামেলা হয়েছে। পরে বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।”

এ বিষয়ে রাবি প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, “এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযুক্ত জেমস ও ভুক্তভোগীদের সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছি।”