জাফলং ভ্রমণ: এক টুকরো স্মৃতি, এক আকাশ সুখ

নাঈম আহমদ শুভ, শাবি প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২২, ০৩:৩০ পিএম

‘প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকে/ হারাতে ইচ্ছে হয় পাহাড়ি নদীর বাঁকে/ দুর্গম পথ পেরিয়ে পাহাড় জয়ের নেশা/ প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে নিজেকে ভালোবাসো।’ সেদিন তারই প্রতিফলন ঘটেছিল প্রকৃতিকন্যা খ্যাত ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড় বেষ্টিত সিলেটের সৌন্দর্যের রাণী জাফলংয়ে। দীর্ঘ বন্ধের পর যখন আবার চেনা প্রাণের সম্মিলন, চেনা মনের মিলন ঠিক তখনই মনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে জাফলং ভ্রমণের আয়োজন করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীরা।

দিনটি ছিল শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা বাজে। হুটহাট ঘুম থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে। ব্রাশ করে, হাত মুখ ধুয়ে দ্রুত রুমে চলে আসি। আজ মনটা অনেক উৎফুল্ল, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ঠিক আটটায় পৌঁছাতে হবে গোল চত্বরে। প্রতিদিনের মতো আজও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। কিন্তু আজ উদ্দেশ্য ভিন্ন। আজ আমাদের প্রথম ব্যাচ ট্যুর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সুযোগ হয়নি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার। তাই দীর্ঘ বন্ধের রেশ কাটাতে আমাদের এই আয়োজন। সবার সম্মতিতে আমরা জাফলং ভ্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সকাল সাড়ে আটটায় গোলচত্বর থেকে বাস ছাড়ে সিলেট শহর থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার দূরবর্তী প্রকৃতিকন্যার দেশ জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে। সারাক্ষণ গাড়িতে গান, আড্ডা আর খুনসুটিতে সময় কাটে সবার। চারিদিকে সবুজ শ্যামল সমতল ভূমি ও পাহাড়বেষ্টিত দৃষ্টিনন্দন জায়গা দেখতে দেখতে প্রায় দুই ঘণ্টা ভ্রমণ করার পর অবশেষে আমরা পৌঁছে যাই নির্ধারিত জায়গায়। 

গাড়ি থেকে নেমেই সবার মনে কি যে আনন্দ! প্রকৃতিকন্যার অপূর্ব চেহারা সবাইকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। দেরি না করে সবাই মিলে প্রথমে আমরা গ্রুপ ছবি তুলি। পরে যাত্রা শুরু করি সোজা ভারতের সীমান্তে অবস্থিত পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানির দিকে। সেখানে সবাই মিলে সাঁতার কাটার আনন্দটাই অন্যরকম। এদিকে পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সেই সঙ্গে আকর্ষণীয় করে তুলেছে আমাদের ভ্রমণ পিপাসু হৃদয়কেও। অপরূপ সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক লীলাভূমি সিলেটের এই পর্যটন কেন্দ্র। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে স্তরে স্তরে সাজানো সবুজ গাছপালা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ এবং ডাউকি পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবিরাম প্রবহমান জলপ্রপাত দেখলেই মন ভরে যায়। এক এক করে সব জায়গা ঘুরে দেখি আমরা। হাসি আনন্দে সারাক্ষণ অতিবাহিত হয় আমাদের। ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে তোলা হয় নানা ভঙ্গিমায় স্থিরচিত্র। দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে যায়। দুপুরের খাবারের জন্য আমরা একটা স্থান নির্ধারণ করি। পরে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজেদের গন্তব্যের দিকে যাত্রা করি। জাফলংয়ের রূপ সৌন্দর্য নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সমাপ্তি ঘটে আমাদের প্রথম ব্যাচ ট্যুর। সবার অংশগ্রহণে হৃদয় পটে অংকিত হয় এক টুকরো স্মৃতি আর সাথে অনুভূত হয় এক আকাশ সুখ।

জাফলং ভ্রমণ সম্পর্কে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের হাবিবা আক্তার লিনা বলেন, “স্কুলে থাকতে অনেকবার পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে জাফলং যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। ভার্সিটিতে উঠে বন্ধুদের সঙ্গে জাফলংয়ে এসে সৌন্দর্য অবলোকন করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে, এইপাড়ে বাংলাদেশ ঐ পাড়ে ভারত, দেখলে মনে হয় এটা যেন দুই দেশের মিলনায়তন। জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সবমিলিয়ে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার মতো একটি দিন আমরা পার করেছি।”

প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে শাকিল হাওলাদার বলেন, “ভ্রমণের প্রতি আমার সব সময়েই একটা আকর্ষণ থাকে আর সেটা যদি হয় জাফলং ভ্রমণ, তাহলে তো আর কথাই নেই। দীর্ঘ ছুটির পর বন্ধুদের নিয়ে জাফলং ভ্রমণ আমাকে মোহিত করে তুলেছিল। সত্যিই জাফলংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা মজাই আলাদা। জাফলং কল্পনার চেয়ে বাস্তবে অনেক বেশি সুন্দর।”

তানিশা আক্তার বলেন, “জাফলংকে কেন পাথরকন্যা বলা হয় এটা না দেখলে বুঝতামই নাহ। যেদিকে তাকাই শুধুই পাথর আর পাথর। নিচে স্বচ্ছ ঠান্ডা পানি, আর উপরে নীল আকাশ। মন ভালো করে দেয়ার মতো একটা পরিবেশ। এক কথায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন ভরপুর হয়ে আছে জাফলংয়ে।”

তোফাজ্জল আহাম্মেদ হৃদয় বলেন, “জাফলং দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনন্য। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কোনো কমতি নেই। এখানে এসে খুবই ভালো লেগেছে।”

মারজানা আক্তার বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশের অন্যতম বিউটি স্পটের নানা রূপ সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। নানা ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও সবার সাথে আনন্দ ভ্রমণে এসে বেশ ভালোই লেগেছে।”