বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে খাটিয়ায় মরদেহ সামনে রেখে বসে আছেন এক শিক্ষার্থী। আর তার পেছনে কয়েক সারিতে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সবার গায়ে জড়ানো কাফনের কাপড়। কপালেও সাদা পট্টি বাঁধা।
এভাবেই প্রতীকী মরদেহ সামনে রেখে ও কাফনের কাপড়ে পরে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা কাফনের কাপড় এখন প্রতীকীভাবে গায়ে জড়ালেও অল্প সময়ের মধ্যে তা আমাদের অনশনরত শিক্ষার্থীদের গায়ে জড়াবে। আপনি (উপাচার্য) আমাদের দাবি মেনে নিন। ২৪টা প্রাণের চেয়ে একটা চেয়ারের মূল্য বেশি না। আপনি পদত্যাগ করুন।”
তারা আরও বলেন, “স্বৈরাচার উপাচার্যের জন্য যদি মরতে হয়, তাহলে শুধু ২৪ জন কেন, আমরা সবাই মরতে রাজি। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন ছাড়বো না। স্বৈরাচারী উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত।”
এর আগে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে অনশন করছেন ২৪ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে কিলো রোডে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন তারা। এরই মধ্যে অনশনের প্রায় ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কেউ অনশন ভাঙেননি।
এরই মধ্যে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ১৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা অনেকটা দুর্বল হওয়ায় প্রায় সবাইকেই স্যালাইন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে কথা বলতে ঢাকায় গেছেন শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে কথা বলতে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছেছে। শনিবার (আজ) শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।