জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে স্পষ্টকরণ ও রোডম্যাপ প্রকাশসহ ৮ দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান বৈষম্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনের সর্বশেষ উদ্যোগের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ৫ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব ন্যায়সংগত দাবি-দাওয়া উপস্থাপন হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তাতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। এর সঙ্গে ৮টি দাবি তুলে ধরেছেন তারা। দাবি গুলো হলো,
১. এস্ট হামলাকারী ও ইন্ধনদাতায় ফ্যাসিস্ট নদাতাদের বিচারের আওতায় আনা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে হামলা ও হুমকির সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হলেও, এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অবিলম্বে এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে করতে হবে।
২. আহত শিক্ষার্থীদের সকল অ্যাকাডেমিক ফি মওকুফ :
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট পতনের পর বিলম্বিত করছে। আহত শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমি ফি মওকুফের দাবি করেছে। আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ নিশ্চিত দ্রুততম ১ দাবি বারবার জানানো হলেও প্রশাসন নানা অজুহাতে বিষয়টি করেনি। এ দাবি পূরণ করতে হবে।
৩. গত ১৫ বছরে সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছ তদন্ত ও প্রতিবেদন একাশ : ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শ্বেতপত্র উপস্থাপন
ফ্যাসিবাদ কায়েমের লক্ষ্যে স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিগত ১৫ বছর ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি।
৪. দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত সম্পন্ন ও অগ্রগতির প্রকাশ এবং ২০ কার্যদিবসের মধ্যে সকল দুর্নীতির শ্বেতপত্র উপস্থাপন
৫ আগস্টের শিক্ষার্থীদের মূল দাবি ও সে লক্ষ্যে কার্যক্রমসহ দুই দফা আন্দোলনের পরেও দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজের অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান না। পাশাপাশি আমাদের দারি ছিল নির্দিষ্ট সময় অন্তর অগ্রগতির তথ্য শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। সেটিও গুরুত্বহীনভাবে নিচ্ছে প্রশাসন। দ্রুত সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ শুরু ও সম্পন্ন করতে হবে এবং প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণসহ সকল ধাপের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। যার দাবি আমরা ইতোপূর্বে জানিয়েছি, তা আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন : ১৫ দিনের মধ্যে হলদ্বয় নির্মাণ কাজ আরম্ভকরণ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের মধ্যে আবাসন সংকট নিরসনে ‘বাণী ভবন হল’ ও ‘হাবিবুর রহমান হল’ নির্মাণের অনুমতি পাওয়ার পরেও নানা কারণে বিলম্বিত করা হচ্ছে। যা স্পষ্টতই প্রশাসনের অনাগ্রহের প্রতিফলন। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের অবস্থান অনড়। হল দুটি নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসনের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সিট বণ্টনের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
৬. আবাসন বৃত্তি প্রদান ও আনুপাতিক বাজেট বরাদ্দকরণ
আবাসন সংকট নিরসনে প্রশাসনের পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত আবাসন বৃত্তি কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া আগামী বাজেটে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ আনতে হবে।
৭. সমাবর্তন আয়োজন :
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে মাত্র একবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ সমাবর্তন আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।
৮. তিন কার্যদিবসের মধ্যে জকসুর নীতিমালা ও নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম ‘জকসু’র নীতিমালা প্রণয়ন এবং নির্বাচন সংক্রান্ত রূপরেখা নির্ধারণ করে আগামী রোববারের মধ্যে জকসুর খসড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করতে হবে এবং তা আগামী এক কার্য দিবসের মধ্যে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হবে।
উল্লেখিত সকল দাবির বাস্তবায়ন না হলে আমরা বৃহত্তর ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হব। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান, দায়িত্বশীলতা ও শিক্ষার্থী স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করুন।