বাসের সিট ধরা নিয়ে ইবির ২ বিভাগের মারামারি, আহত ১৭

তানিম তানভীর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ০১:৩৬ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছবি : সংগৃহীত

বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ১৩ শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শিক্ষক ও ২ নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে আইন ও আল-ফিকহ্ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলন করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে রাতে তাদের ওপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ করেন তারা।

তবে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের বিভাগকে  সন্ত্রাসী বিভাগ বলায় ও আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় বাকবিতণ্ডা ও এই মারামারির ঘটনা ঘটে।

এদিন সকালে প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীর। এসময় হামলায় জড়িতদের তদন্তপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তারা। এ ছাড়া প্রক্টরের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি করেছেন ইবি শাখা ছাত্রদল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সানন্দা বাসে সিট ধরা নিয়ে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের সুমন অভ্রের সঙ্গে আল-ফিকহের ২০১৯-২০ বর্ষের রাকিবের বাকবিতণ্ডা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সুমন প্রক্টর ও তার আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফোন করে জানায়। পরে আইনের শিক্ষার্থীরা এসে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে গাড়ি আটকায়। এসময় তারা বাসের সামনের গ্লাস ভাঙচুর করে বলে জানায় বাসের চালক। পরে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে প্রক্টর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানায়। তখন চলে যাওয়ার সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বললে অনুষদ ভবনের সামনে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা আরম্ভ হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও আহত হন। পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, শনিবার মধ্যরাতে আইন বিভাগের মাস্টার্সেও শিক্ষার্থী সুমনের ওপর আল ফিকহ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের রাকিব কর্তৃক বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিসে এই ঘটনার বিচারের দাবিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে প্রক্টর অফিসে রাকিব তার ভুল স্বীকার করে মাফ চায় এবং এ বিষয়ে সে লিখিত মুচলেকা দিতে সম্মত হয়। এই সিদ্ধান্তকে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানায়। তবে মিটিংয়ের এই সিদ্ধান্ত বাহিরে জানাতে গেলে সেখানে উপস্থিত আল ফিকহ ও অন্য অনুষদের কিছু শিক্ষার্থী ‘আল ফিকহ’ বিভাগের নামে স্লোগানসহ বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়। এরপর তারা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়।

এ হামলায় সরাসরি সম্পৃক্ত ও ইন্ধনদাতা ছিলেন, জাকারিয়া (বঙ্গবন্ধু হল), আমিনুর (জিয়া হল), হাসানুল বান্না (লালন হল)। তাদের কেউ আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থী নন। তবে সরাসরি হামলায় জড়িতের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই বলে জানান তারা।

হামলায় শিকার শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ বলে দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগের বিষয়ে জাকারিয়া বলেন, “প্রথম থেকেই আমি সেখানে ছিলাম। যখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি বা মব সৃষ্টির পরিবেশ হয়েছিল। তখন অবস্থা শান্ত ও স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। কিন্তু অজানা কারণে অনেকেই আমার ওপর চড়াও হয়। নির্দিষ্ট করে আমার নাম উল্লেখ করা উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনে করছি। কাউকে উসকানি দেওয়া বা আঘাত করার সঙ্গে আমার ন্যূনতম সম্পর্ক ছিল না।”

হাসানুল বান্না বলেন, “কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আমি দুই পক্ষকে মারামারি থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার ওপর এমন অভিযোগ করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরও জানান, হামলার ঘটনায় আইন বিভাগের কামরুজ্জামান, আহাদ, কবির, জুবায়ের, সোহানুর, নাইমুর, তালহা ও বায়েজিত সহ আরও শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় প্রক্টর নিবৃত্ত করতে আসলে হামলার মাঝখানে পরে যান। যেখান থেকে আইনের শিক্ষার্থীরা প্রক্টর স্যারকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন।

তাদের দাবি, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারধর ও আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে। গত রাতে বাস ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে আইনের শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল না। তাই এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। আইন বিভাগের ইশমামকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আমাদের ন্যায্য দাবিকে কুচক্রী মহল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এর প্রেক্ষিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস, হল ও মেসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই অবিলম্বে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমাদের বিভাগকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা ও আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় বাকবিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে আমাদের ৫ শিক্ষার্থী আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “আমাদের মিটিং চলমান। সব বিষয় নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী দোষীদের বিচার করা হবে।”