৪৫ বছরে মাত্র ৪ সমাবর্তন, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে এর যাত্রা শুরু হয়। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়েছে মাত্র চারটি সমাবর্তন। সর্বশেষ ৬ বছরে কোনো সমাবর্তন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে প্রথম, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২৮ মার্চ ২০০২ সালে তৃতীয় ও সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পেরিয়ে ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে ১৭৫ একরের এ বিদ্যাপীঠ। তাই পঞ্চম সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী।

এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় মিলছে না শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে অনেককে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের সমাবর্তনে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী মূল সনদপত্র হাতে পান। চতুর্থ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ বর্ষ পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ২০১৪-১৫ বর্ষ পর্যন্ত এবং ২৩৬ তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন প্রাপ্ত এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।

বর্তমানে ২০১৭ -১৮ বর্ষের অধিকাংশ বিভাগের স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিভাগের স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি বর্ষের এমফিল ও পিএইচডি গবেষকরা নিয়েছেন তাদের ডিগ্রি। তবে তাদের কেউই পাননি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন,
“সমাবর্তন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য, যা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ পরিশ্রমের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করে। এটি শুধু অর্জনের উদযাপন নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণার উৎস। ছয় বছরে সমাবর্তন না হওয়া হতাশাজনক; এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গৌরবের অংশ।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এর পরিচালক ও দ’‍‍`ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল হোছাইন বলেন, “সমাবর্তন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কাঙ্ক্ষিত। এতে শিক্ষার্থীরা যে গাউন পরে এর মাধ্যমে নিজেদের আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। বহির্বিশ্বে মূলত অনুষদভিত্তিক সমাবর্তন আয়োজন করার ফলে নিয়মিতই তা করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে ভিন্ন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি অনুষদভিত্তিক এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিতে পারেন তাহলে সমাবর্তন যথাযথভাবেই আয়োজন করা সম্ভব।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। এটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সমাবর্তন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয়। নিয়মিত সমাবর্তনের জন্য অনুষদভিত্তিক বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা ভাবছি। এ বিষয়ে ডিনদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”