যশোরের শার্শা উপজেলায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে আমন ধান ও সবজির আবাদসহ প্রায় ৩০০ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন উপজেলার শতাধিক কৃষক। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শার্শা উপজেলার পুটখালী, গোগা, কায়বা, ও বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা যায়।
উপজেলার পুটখালী গ্রামের সবজি চাষি সাইফুল ইসলাম জানান, তার প্রায় এক একরের সবজি ক্ষেত পানির নিচে। পানি সরে গেলেও কোনোভাবে রক্ষা করতে পারবেন না এ ফসল। এরই মধ্যে ক্ষেতের সবজি গাছে পচন ধরেছে। পানি নেমে গেলেও গাছগুলো মরে যাবে। আর পানির নিচে তলিয়ে থাকা পটলের লতিগুলো পচে যাবে। চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। পুরোটাই এখন জলে ভাসছে।
নূর মোহাম্মদ বলেন, “এক মাস পর সবজি বাজারে তোলার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন পানির নিচে ডুবে গেছে। লাভের বদলে উল্টো লোকশানে পড়ে গেলাম।”
কায়বা এলাকার কৃষক আল-আমীন ৩৬ শতাংশ জমিতে কুলের চারা লাগিয়েছেন। এবার কুল বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন ও দেখেছিলেন। চারাগুলোতে ফুলও ধরেছিল। টানা বর্ষায় জমিতে পানি জমে যাওয়ায় গাছগুলো আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। কিছু গাছ পানির নিচে ভেঙে পড়েছে। কুল গাছ ছাড়াও তার ঢেড়স ও কলাই ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নিজামপুর এলাকার কৃষক কাশেম আলী তিন বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। পুরো ক্ষেতের কাঁচা ধান এখন পানিতে ভাসছে। এক তৃতীয়াংশ ধানও পাবেন না তিনি।
কৃষক সেলিম রেজা বলেন, “সবেমাত্র ধানের শিষ বের হয়েছে। একটু রৌদ্র হলেই ধান পাক ধরার কথা। এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে ধানগাছ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ধান যদিও কিছু নেওয়া যায় তারপরও কাটতে শ্রমিক খরচ বেশি হবে। এমনিতেই ধান ক্ষেতে এবার ওষুধ খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। এরপর পানি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে।”
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা জানান, কয়েকটি স্থানে ক্ষেতে থাকা আমন ধানের গাছ ভেঙে পড়েছে এবং উপজেলার পুটখালী, গোগা ও কায়বা ইউনিয়নের বিল এলাকার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আমন ক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে পানি জমে আছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানসহ ফসলের ক্ষতি কম হবে।
দীপক কুমার আরও জানান, “উপজেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এ বৃষ্টির পানির সঙ্গে ভারতের পানি যাতে না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে আমরা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুরে ইছামতী নদীর সামনে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকানোর চেষ্টা করছি। নতুন করে পানি না ঢুকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে।”