পাটের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম
জমি থেকে পাট কাটছেন কৃষক। ছবি : প্রতিনিধি

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টাঙ্গাইলে চলতি বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে পাট আবাদ করতে সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষ দিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আবাদ বৃদ্ধি পায়। নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে পাটের তেমন কোনো রোগবালাই নেই। পাটের বাজার দাম ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

পাট চাষিরা বলছেন, পাটের ভাল দাম পেতে শতভাগ পলিথিনের বস্তা পরিহারের পাশাপাশি দেশের সব পাটকল চালু ও বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিতে হবে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে সোনালি আঁশ চাষ। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদন হবে। চলতি বছরের পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২০০ জন কৃষককে এক কেজি করে পাটের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায় পাটের আবাদ করা হয়েছে। চাষিরা এখন ব্যস্ত জাগ দেওয়া পাটের আঁশ ছাড়াতে। বেশিরভাগ জমির পাটই কাটা শেষ হয়ে গেছে। এর অধিকাংশই জাগ দেওয়া হয়ে গেছে। অনেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউ বা পাটশোলার আঁটি বেঁধে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার পাট ভাঁজ করে রোদে মেলে দিচ্ছেন। পাট ও পাটশোলার বাজার দরও ভালো। মণ প্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের আঁশ বিক্রি করে যেমন কৃষক টাকা পায় তেমনি পাটের কাঠি জ্বালানি হিসেবে, ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে আবার সোনালি আঁশের রাজত্ব ফিরে আসছে এ জেলাতে।

পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষকেরা। ছবি : প্রতিনিধি

পাট চাষিরা জানান, দেশি, তোষা, কেনাফ, রবি-১ ও ভারতীয় বঙ্গবীর জাতের পাট সব থেকে বেশি আবাদ হয়। পাট অফিস ও কৃষি অফিস থেকে প্রায় প্রতিবছর পাটের বীজ ও সার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। কিন্তু এই বীজগুলো সময় মতো তাদের কাছে পৌঁছায় না। এতে পাটের আবাদ ব্যাহত হয়। সময় মতো পাট বীজ হাতে পেলে আবাদ অনেক অংশে বৃদ্ধি পাবে।  

দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক শাহাদৎ হোসেন বলেন, “পাট আবাদের প্রথম দিকে বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে পাট বপন করেছিলাম। যে পাটগুলো বীজ বপন করেছিলাম, সেগুলো চার হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। পরে পাটগুলো ৩৪০০-৩৫০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। এখনো আমার কিছু পাট কাটা বাকি রয়েছে। সেগুলোর দাম কেমন পাবো এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে পাটের যে ফলন হয়েছে, এখন যে দাম রয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি।”

একই গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় সাত মণ ফলন হয়েছে। ৪ বিঘা জমির পাট ৩৪০০ টাকা মণ হারে বিক্রি করে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি। ৪ বিঘা জমির পাট আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এতে আমার ৫৫ হাজার টাকার ওপরে লাভ হয়েছে।”

দেলদুয়ার উপজেলার ছিলিমপুর হাটের পাট ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করি। এ ছাড়া প্রতি শুক্রবার ছিলিমপুর হাটে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয়। হাটের দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ পাট কেনাবেচা হয়। এ বছর ৩৫০০-৩৮০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছি। মণে ৮০-১০০ টাকা দরে লাভ করে বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করি।”

জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান খান জানান, পাট অধিদপ্তর থেকে চলতি বছর জেলার ১২টি উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষককে এক কেজি পাট বীজ ও ১২ কেজি করে সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও তালিকাভুক্ত ৯০০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।  

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার দুলাল উদ্দিন বলেন, পাট চাষিদের সুদিন ফিরেছে। পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার পাট চাষে ঝুঁকেছে কৃষক। পাট চাষ করে কৃষক এখন অনেক লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।