নওগাঁর আত্রাইয়ে ১৩ দিনের ব্যবধানে দুই শিশু ও সুমন প্রামাণিক (৪০) নামে এক ব্যক্তির রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন। তবে সুমনের নিখোঁজের পরের দিন বাড়ির অদূরে রাস্তায় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত এবং জমির মধ্যে পড়ে থাকা রক্ত উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে পরিবারের স্বজনদের।
নিখোঁজ সুমন উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের কয়সা গ্রামের সাহাদত প্রামানিকের ছেলে।
সুমন প্রামানিকের স্ত্রী বুলি বেগম বলেন, ২০ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে আসেন সুমন। এরপর তাকে ভাত খাবার কথা বলে আমি ঘুমিয়ে যাই। ফজরের নামাজের সময় ওঠে দেখি সুমন ঘরে নেই। বাড়ির প্রধান দরজার বাহিরে থেকে ছিকল আটকানো। পরে প্রতিবেশীর লোকজন এসে দরজা খুলে দেয়। সুমনের মোবাইলে ফোন করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে খোঁজাখুঁজি করে কোনো সন্ধান মেলাতে পারিনি।”
বুলি বেগম সাংবাদিকদের জানান, সুমনের পরনে শুধুমাত্র লুঙ্গি এবং হাতে গামছা ও মোবাইল ফোন ছিল। এছাড়া পরনে আর কোনো কাপড় ছিল না।
তিনি বলেন, পরে বাড়ির অদূরে রাস্তায় ফোটা ফোটা রক্ত এবং রাস্তার পাশে জমির মধ্যে জমাট বাধা রক্ত দেখা যায়। এছাড়া জমির মধ্যেই সিমেন্টের খুঁটি পড়ে ছিল সেটাতেও রক্ত লেগে ছিল। বিষয়টি জানালে পুলিশ এসে রক্তসহ আলামত নিয়ে গেছে। তবে রক্তগুলো মানুষের কিনা তা পরীক্ষা করা হবে বলে পুলিশ তাদেরকে জানিয়েছেন।
বুলি জানান, সুমনের বন্ধু আমরুল ইসলাম ঘটনার একদিন পর জানিয়েছেন, রাত ১২টা নাগাদ সুমন তাকে ফোন করে নাটোর যাবার কথা বলেছিল। কিন্তু এত রাতে নাটোর কেন যাবেন তার কোন উত্তর দেয়নি সুমন। পরে আরও কয়েক বার ফোন করলে আমরুল আর রিসিভ করেননি বলে আমরুল তাদেরকে জানিয়েছেন।
বুলি আরও জানান, সুমন বিভিন্ন লোকজনকে পাসপোর্ট করার কাজে সহায়তা করেন। এছাড়া থানার নানান কাজেও সহযোগিতা করেন। এলাকার দুটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন।
সুমনের মা মনোয়ারা বিবি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, কেউ হয়ত সুমনকে গুম করে ফেলেছে। তবে যেটাই ঘটুক আমরা সুমনকে ফেরত চাই।
এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সুমন নিখোঁজের নয় দিনের মাথায় একই এলাকার মিরজাপুর কাছেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে সোয়াইব হোসেন (১১) নামের এক ছাত্র নিখোঁজ হয়েছে।
নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্র উপজেলার জাত আমরুল গ্রামের মুরতাদুল ইসলামের ছেলে।
ওই মাদ্রাসার মহতামিম আবুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৯ জুন মাদ্রাসা খোলার পর তার নানা আত্তাব হোসেন বিকেলে মাদ্রাসায় রেখে যান। এর পর সন্ধার পর থেকে সে নিখোঁজ হয়।
সোয়াইবের মামা আসলাম বলেন, “আমরা অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। কোথাও সন্ধান করতে পারছি না। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এ ঘটনার চার দিনের মাথায় সাহাগোলা গ্রামের জুয়েল হোসেনের ছেলে মুসাঈদ (১৪) অটো চার্জার ভ্যান বাড়ির পাশে রেখে নিখোঁজ হয়।
মুসাঈদের মা ফাতেমা বিবি মোবাইল ফোনে বলেন, “মুসাঈদ চার্জারচালিত অটোভ্যান চালাত। ৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশে শুধু ভ্যান দেখতে পাই। কিন্তু ছেলেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।”
জানতে চাইলে আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের বিষয়গুলো আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।