হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

নয়ন দাস, শরীয়তপুর প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৪, ০৩:১৪ পিএম

রজনীকান্তের কবিতায় সুন্দর বাসা নিয়ে চড়ুই পাখির সঙ্গে বড়াই করলেও এখন আর তেমন দেখা যায় না বাবুই পাখির। পরিবেশ বিপর্যয় ও অতিরিক্ত মাত্রায় তালগাছ নিধন করায় আবাসস্থলসহ জীবন সংকটে পড়েছে এই পাখি। বিলুপ্ত প্রায় পাখিটি এখনো নারিকেল গাছ, খেজুর গাছ ও তালগাছে বাসা বেঁধে কোনো মতে বেঁচে আছে।

সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাটসহ অন্যান্য উপজেলা ঘুরে বাবুই পাখির এমন জীবনচিত্র দেখা গেছে।

জানা যায়, এক যুগ আগেও জেলার ফসলি মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকত বাবুই পাখি। প্রাকৃতিক ভাবে ফলজ বিভিন্ন গাছ থেকে খাবার খেয়ে মনের আনন্দে তৈরি করত সুন্দর বাসা।

বর্তমানে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে বন উজাড়সহ অতিরিক্ত পরিমাণে তালগাছ নিধন করায় জীবন সংকটে পড়েছে বাবুই পাখি। নিখুঁত শিল্পময় কারুকাজে বাসা তৈরি করে শিল্পের কারিগর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বাবুই পাখি এখন বাড়ির কোণের নারিকেল গাছ, খেজুর গাছসহ তালগাছে বাসা বেঁধে কোনো ভাবে বেঁচে আছে। বৃক্ষ নিধনের ফলে বন উজাড় হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে বাসা ভেঙে গেলে অন্য গাছে আশ্রয়ও নিতে পারে না তারা। অন্যদিকে বনে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ফলজ গাছও এখন বিলুপ্ত প্রায়। ফসলি মাঠে কীটনাশকসহ বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় প্রাকৃতিক খাবারের সংকটে রয়েছে পাখিটি। এ ছাড়াও শিকারিরা বাবুই পাখি হত্যা বন্ধ করছে না। আবার কেউ কেউ বাসা-বাড়ি সাজাতে বাবুই পাখির বাসা গাছ থেকে নামিয়ে নিয়ে যান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালগাছসহ বাবুই পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল ও খাদ্য সংকটের সমাধান না হলে শিগগিরই পাখিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব শরীয়তপুরের সদস্য সচিব এস এম মজিবুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, বাবুই পাখি সাধারণত উঁচু গাছে বাসা বাঁধতে পছন্দ করে। বাবুই পাখি বাসা বাঁধার জন্য তালগাছ বেশি পছন্দ করে। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় তালগাছ নিধন, বন উজাড় করায় বাবুই পাখি বাসা বাঁধতে না পারায় বর্তমানে তারা আবাসস্থল সংকটে পড়েছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে তারা বিষমুক্ত খাবার না পাওয়ায় খাদ্য সংকটেও রয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশকে গাছ রোপণ করে পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল সৃষ্টি করলেই বাবুই পাখি প্রকৃতিতে টিকে থাকবে।

শরীয়তপুরে প্রতিনিয়ত তালগাছের সংখ্যাহ্রাস পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে শরীয়তপুর জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে দুর্যোগ প্রশমনে তাল, খেজুর রোপণসহ সমন্বিত প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব আকারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন।

শরীয়তপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, বাবুই পাখি পরিবেশের জন্য উপকারী পাখি। বাবুই পাখি ফসলি মাঠের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে। তারা বনজ ফল খায়। বাবুই পাখি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ পরিবেশের বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, নির্বিচারে তালগাছ কর্তন, খাদ্যের অভাব ও অসাধু শিকারিদের ফাঁদ।