প্রতি বছর মোংলা বন্দরে আয় ছাড়াচ্ছে ১০০ কোটি টাকা

এমএম ফিরোজ, মোংলা প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুরছে মোংলা বন্দরের অর্থনীতি। গত কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সুবাদে মোংলা বন্দরে বেড়েছে জাহাজের আগমন। যার ফলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও রাজস্ব দুটোই বেড়েছে। এতে মোংলা বন্দরের প্রতি বছর লাভ হচ্ছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের (এমপিএ) তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৩০.৫৯ শতাংশ, আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নিট মুনাফা বেড়েছে ২১.২৮ শতাংশ।

কনটেইনার জাহাজ আগমনের নতুন রেকর্ড করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ)। এপ্রিল মাসে মোংলা বন্দরে ৮টি কনটেইনারবাহী জাহাজ এসেছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

এমপিএর উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান জানান, এপ্রিল মাসে যে আটটি কনটেইনারবাহী জাহাজ এসেছিল, তাতে ১ হাজার ৮৭৫ টিইইউএস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার) পণ্য ছিল।

তিনি জানান, ২০১৯ ও ২০২০ সালের এপ্রিল মাসেও আটটি জাহাজ বন্দরে এসেছিল। তবে সেই সময়ে কনটেইনারের সংখ্যা কম ছিল।

চলতি অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যাও বেড়েছে জানিয়ে মাকরুজ্জামান বলেন, এই অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মোংলা বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৫ হাজার ২৮ টিইইউএস। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৬৫ টিইইউএস।

এসব কনটেইনারবাহী জাহাজ আগমনের ফলে চলতি অর্থবছরে মোংলা বন্দরের রাজস্বও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে মোংলা বন্দরের নিট মুনাফা হয়েছে ৭০.১৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ৫৭.৮৭ কোটি টাকা।

কনটেইনারবাহী জাহাজের আগমন ও মুনাফা বাড়ার কারণ জানিয়ে এমপিএর উপপরিচালক বলেন, “বন্দরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট সংযোজনের ফলে জেটি থেকে দ্রুত কনটেইনার খালাস ও বোঝাই করা সম্ভব হচ্ছে। একইসঙ্গে গিয়ারলেস জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কনটেইনারবাহী জাহাজ আসা বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের বন্দরের প্রতি আস্থা বাড়ার পাশাপাশি অর্থ খরচও কমেছে। আমরা প্রতিনিয়ত ব্যসায়ীদের সঙ্গে সভা করে তাদের বন্দর ব্যবহারে জন্য উৎসাহিত করছি।”

মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৪টি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে সরকার।

মাকসুজ্জামান জানান, বিভিন্ন ধরনের ১৩৬টির বেশি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে বন্দরের জন্য। এছাড়া বর্তমানে ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর আওতায় পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় ৩.১১ কোটি ঘনমিটার ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারে অ্যাংকরেজ পর্যন্ত ৯.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এবং জেটি এলাকায় ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নির্বিঘ্নে আগমন-নির্গমন করতে পারছে।

একইসঙ্গে ১২৮টি বিভিন্ন ধরনের বয়া, দুটি রোটেটিং বিকন, ছয়টি জিআরপি লাইট টাওয়ার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে বন্দর চ্যানেলে। ফলে মোংলা বন্দরে এখন দিনে ও রাতে জাহাজ আগমন-নির্গমন করতে পারছে। এতে বন্দরে কার্গো ও কনটেইনার সুষ্ঠুভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে হ্যান্ডলিং করা যাচ্ছে।

১৯৯০-৯১ অর্থবছর বছর থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত মোংলা বান্দর ধারাবাহিকভাবে লাভজনক ছিল। তবে ২০০২-০৩ থেকে ২০০৬-০৭ অর্থবছর পর্যন্ত লোকসানের শিকার হয়। এরপর ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে আবারও লাভের মুখ দেখছে বন্দরটি।

সর্বশেষ ৪-৫ চার বছর ধরে এ বন্দর থেকে বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি লাভ হচ্ছে জানান মাকরুজ্জামান।