এক অসচ্ছল পরিবারের মেয়ের বিয়ে। আয়োজন ছিল ছোট্ট। খুব কাছের কয়েকজন স্বজনকে দেয়া হয়েছিল দাওয়াত। চলছিল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তখন রাত ১১টা। আত্মীয়রা কিছুটা আনন্দে মেতেছিলেন। এমন আনন্দঘন মুহূর্তে হঠাৎ একদল দেশীয় অস্ত্রধারী এসে ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলা ভাঙচুর লুটপাট শুরু করে। চেয়ার, টেবিলসহ বাড়ির আসবাবপত্র গুঁড়িয়ে দিতে থাকে।
হামলাকারীরা অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করে। এক অতিথির প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়। এভাবে গোটা বিয়েবাড়িতে নারকীয় তাণ্ডব চালালে ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েন সবাই। বিয়ের আনন্দ মাটি হয়ে ভয় আর আতঙ্কে রূপ নেয়।
ভয়ঙ্কর এই ঘটনা ঘটেছে ঈদের পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে। চেরাগ আলী বেপারীকান্দি গ্রামের বুধাইরহাট বাজার সংলগ্ন সৈয়দ তাজুল ইসলামের বাড়িতে।
ভুক্তভোগী ভুক্তভোগী সৈয়দ তাজুল ইসলামের অভিযোগ, বিয়ের দাওয়াত না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছেন বিলাসপুর ইউনিয়নের সদস্য নাসির বেপারী ও তার লোকজন। এ ঘটনায় তাজুল ইসলামের ছোটভাই সৈয়দ সাব্বির হোসাইন বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার পর পুলিশ আব্দুর রহমান খাঁ (২২) নামে একজনকে আটক করেছে।
ভুক্তভোগী সৈয়দ তাজুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, আমি নিরীহ মানুষ। আমার চাচা অসচ্ছল ও অসুস্থ হওয়ায় চাচাতো বোনের বিয়ের দায়িত্ব নিয়ে একটা ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। সেখানে কাছের স্বজনদের ছাড়া কাউকে দাওয়াত দেইনি। কিন্তু মেম্বার নাসির বেপারী ও তার লোকজন বলেছে তাদের ইচ্ছামতো দাওয়াত না করলে ভালো হবে না। আর সে কারণেই আমার বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বোমাবাজি করে ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো এমন তাণ্ডব চালানো হলো।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, চাচাতো বোনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান মেম্বার নাসির বেপারীসহ তার লোকজন ককটেল বোমাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। তারা বিয়ে বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বসতঘরে বোমা মারে। বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে রান্না করা খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে নষ্ট করে দেয়। দাওয়াতে আসা পিন্টু সরদারের টয়োটা কোম্পানির এলিয়ন এ ফিফটিন মডেলের প্রাইভেটকার কুপিয়ে ভেঙে ফেলে। এতে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি ক্ষতিপূরণসহ সুষ্ঠু বিচার চাই।
মামলার বাদী সাব্বির হোসাইন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। নাসির মেম্বারের মনমতো দাওয়াত না দেওয়ার কারণেই বর্বর হামলা চালিয়েছে। তারা রাতে হঠাৎ বাড়িতে ঢুকেই ককটেল বোমা ফাটানো শুরু করে। এ সময় বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য আনা গরুর মাংসের ডেক নিয়ে যাওয়াসহ যাবতীয় খাবার সরঞ্জাম নষ্ট করে। হামলার সময় আমার পায়ে বোমার আঘাত লাগে। পরে আমি ঘরে লুকিয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখি আমাদের বাড়ি ও ফার্নিচারের দোকানের সব ভাঙচুর ও লুটপাট করে শেষ করে ফেলেছে।
বিয়ে বাড়িতে অতিথি হয়ে আসা অনিক সরদার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, গায়ে হলুদের সময় আমরা আনন্দ করছিলাম। হঠাৎ বেশ কয়েকজন বাড়ির সামনে এসে ককটেল ফাটায়। পরে বাড়িতে ঢুকে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সাজানো সব আসবাবপত্র ভাঙচুর শুরু করে। কোনোকিছু বুঝতে না পেরে তাদের কাছে এর কারণ জানতে গেলে তারা আমাকে ইটপাটকেল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। প্রায় আধাঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর তারা চলে যায়। আরেক অতিথি জেরিন আক্তার বলেন, হামলার সময় একের পর এক বোমার শব্দে আমার শিশু সন্তান আঁতকে ওঠে। এরপর থেকে জ্বরে ভুগছে।
জানতে চাইলে বিলাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কুদ্দুস বেপারী বলেন, আমি এলাকার বাইরে আছি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়।
ঘটনা বিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নাসির বেপারী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, ঘটনার সময়ে আমি বাড়িতে ছিলাম না। তবে জেনেছি তাজুল ইসলাম তার চাচাতো বোনের বিয়েতে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে দাওয়াত দেয়নি। এ নিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টাও করেছি। কিন্তু তাজুল ইসলাম উল্টো তাদের উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় কথা বলেছেন।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, দাওয়াত না দেওয়া নিয়ে এক ইউপি সদস্য ও তার লোকজন বিয়েবাড়িতে হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে ভুক্তভোগীরা মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে এক আসামিকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।