স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আত্রাইয়ের কৃষকেরা

আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৪, ০২:০৭ পিএম

উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা। সেই খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে সঠিক পরামর্শের অভাবে নিরাপদ পদ্ধতিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এ এলাকার কৃষকেরা। সর্তকতার সঙ্গে সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলছেন চিকিৎসকরা। যদিও কৃষকদের সার ও কীটনাশক ব্যবহারে সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

উপজেলার মাঠে কৃষকরা ধান, ভুট্টা, গম সবজিসহ ১২ মাস বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে থাকেন। এখন চলছে বোরো মৌসুম। তাই মাঠের পর মাঠ সবুজে ছেয়ে গেছে। ফসলকে রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যবহার করতে হচ্ছে সার ও বিভিন্ন কীটনাশক। ফসলে কী পরিমাণ সার ও কীটনাশক ব্যবহার এবং কী পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে অনেকটাই অসচেতন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট জমির পরিমাণ ২৮ হাজার ৪১৮ হেক্টর। আবাদি জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৫০ হেক্টর এবং এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে।

উপজেলার মনিয়ারি ইউনিয়নের লালপাড়া গ্রামের কৃষক জুলহক প্রামাণিক বলেন, “আমি এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমার খোঁজখবর কেউ নেয়নি। তাই আমি নিজেই পরিচর্যা করে থাকি। জমিতে সার বা কীটনাশক প্রয়োগের সময় নিজে থেকে যতটুকু পারি মুখে মাস্ক পরে কীটনাশক দিয়ে থাকি। অনেক সময় আমার মাথা ঘোরে, বমি বমি ভাব হয়।”

পাঁচুপুর ইউনিয়নের গুড়নই গ্রামের মান্নান সরদার বলেন, “আমি টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, শসা আবাদ করেছি। প্রতি সপ্তাহে বিষ দিতে হয়।  কোন সবজিক্ষেতে কী পরিমাণ বিষ দিতে হয়, কীভাবে দিতে হয়, আগে এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কেউ কখনো আমাকে বলেনি। এখন অফিস থেকে মাঝে মাঝে একজন লোক আসে। বলেছে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।”

একই ইউনিয়নের ধুলাউরি গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ ও দুলাল সরদার বলেন, “আমাদের এইদিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কোনোদিন কোনো লোক আসে না। আমরা কোনো সেবাও পাই না।”

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে, গত তিন মাসে প্রায় ২০ জন রোগী বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কমপ্লেক্স ভর্তি হয়েছেন।

সচেতনতার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোকসানা হ্যাপী বলেন, কৃষকেরা যখন বিষ প্রয়োগ করবে, তখন তাদের অবশ্যই মুখে, হাতে, শরীরে, পায়ে সেফটি নিতে হবে। বিষ প্রয়োগের পর তাকে ভালোভাবে পুরো শরীর ধৌত করতে হবে।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাপস কুমার রায় বলেন, “কৃষকদের বিষ দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। আমাদের উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার সঠিক পরামর্শ দিয়ে আসছেন। জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের উঠান বৈঠকের মাধ্যমেও সচেতন করা হচ্ছে।”