টানা তিনদিন ধরে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার রংপুর জেলার পীরগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুক পোস্টে এক তরুণের 'ধর্ম অবমাননা'র কথিত অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, বটতলা ও হাতীবান্ধা গ্রামে অন্তত ২০টি বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (১৭ অক্টোবর) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আগুনের খবর পায় তারা। এরপর পীরগঞ্জ থেকে দুটি, মিঠাপুকুর থেকে দুটি ও রংপুর থেকে একটি ইউনিট সেখানে আগুন নেভাতে যায়।
একই সঙ্গে রাত ৩টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো সেখানেই ছিল বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, “ফেসবুকে এক হিন্দু তরুণ ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ পোস্ট দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তরুণের বসতবাড়ির আশপাশে অবস্থান নেয়।”
শেষ পর্যন্ত সেই বাড়িটি রক্ষা করা গেলেও হামলাকারীরা দূর থেকে কিছু বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে জানান তিনি।
মাঝিপাড়ার এক বাসিন্দা বলেন, “আমার বাড়ির সব জিনিসপত্র লুট হয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে আমার তিনটি গরু মারা গেছে। পুলিশ এসেছে কিন্তু অনেক দেরিতে।”
এছাড়াও ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। রাত ১টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। এ সময় আটক করা হয়েছে ২০ জনকে।
এর আগে গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন কুমিল্লার একটি মণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর সেখানে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
এরপর টানা তিনদিন নোয়াখালী, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে রংপুরের পীরগঞ্জের আগে সর্বশেষ গত শনিবার ফেনীতে সংঘর্ষ হয়েছে।
এই তিনদিনের ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত তিনদিনে ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।