বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনজুড়ে নাইলনের বেড়া

এমএম ফিরোজ, মোংলা প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০৪:৪৫ পিএম
২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ গণনা দিবসে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সঠিক সংখ্যা ঘোষণা করা হবে। ছবি : প্রতিনিধি

বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনের কয়েকটি জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে নাইলনের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় এবং লোকালয় ও বনের মধ্যে খাল শুকিয়ে গেছে এমন ৬০ কিলোমিটার এলাকায় জাল দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বন বিভাগ।
তবে প্রাথমিকভাবে দুটি এলাকায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেওয়া হবে নাইলনের বেড়া।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর মেয়াদী সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম চলবে। এতে খরচ হবে ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পের দুটি অংশের একটি হলো বাঘ গণনা এবং অপরটি বাঘ সংরক্ষণে ব্যবস্থা।

সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্ব  বিভাগে বাঘ গণনার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে বিশ্লেষণের কাজ। আগামী ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ গণনা দিবসে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সঠিক সংখ্যা ঘোষণা করা হবে। বাঘ গণনায় খরচ ধার হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা খরচ হবে বাঘ সংরক্ষণ ও অন্যান্য কাজে।

প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ ও শিকারি প্রাণী জরিপ, বাঘের টিলা ও ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হবে। বাঘের ক্যানাইন ডিসটেম্পার ভাইরাস নিয়েও হবে গবেষণা। সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের (ভিটিআরটি) ও কমিউনিটি পেট্রল গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে বাঘ রক্ষা সহজ হবে। এতে বাঘ হত্যা কমবে এবং বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। একটি পাইলট প্রকল্পের মধ্য দিয়ে বাঘ হত্যা রোধ ও মানুষের ওপরে বাঘের আক্রমণ এড়াতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত যৌথভাবে কার্যকর করার চেষ্টা শুরু করেছে উভয় দেশ। এতে কমে আসবে বাঘ মানুষের লড়াই।

তিনি জানান, এই পাইলট প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের সুন্দরবনের দুটি স্থানে নাইলনের তৈরি জালের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বাঘ রক্ষায় পূর্ব সুন্দরবনের বৈদ্যমারী এবং ধানসাগর এলাকায় মোট ১০ কিলোমিটারের মতো নাইলনের বেড়া দেওয়া হবে। পরে সাতক্ষীরা রেঞ্জের গোলাখালি এলাকায় এটি পাইলটিং করা হবে।

আজাদ কবির আরও জানান, এই নাইলনের বেড়ার উচ্চতা হবে ৮ ফুট, যেন কোনো গরু বা মহিষ সুন্দরবনের ঢুকতে না পারে। তেমনি সুন্দরবনের বাঘও যেন গ্রামে না আসতে পারে।

সুন্দরবন পশ্চিমের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ পরিচালক আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, এই নাইলনের বেড়া মোট ২০ কিলোমিটার এলাকা কভার করবে, দুটি পকেটে ১০ কিলোমিটার করে। এটি একটি পাইলট প্রকল্প। যদি এটি কার্যকর হয় তবে বেড়াটি পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত করা হবে।

আবু নাসের মহসিন আরও বলেন, “ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশে নাইলনের বেড়ার সুফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ অংশেও আমরা ওই অনুযায়ী কাজ করব। স্থানীয় কমিউনিটি যেমন ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম, কমিউনিটি পেট্রল টিম এটি দেখভাল করবে ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।”