ভোরের আলো তখন একটু একটু ফুটেছে। সাড়ে ৬টাও বাজেনি। ওই সাতসকালে শহরের প্রেসক্লাব রোডের ছোট্ট একটি চায়ের দোকানে ভিড়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড় সেখানে। চায়ের কাপে তখন তুমুল ঝড়।
রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। ষাটোর্ধ্ব সিরাজ বলেন, “আগে সব সময় নৌকার লোক হইলেও এবার সব ভোট নৌকায় পড়ব না। অনেক হিসাব-নিকাশ হইব ভোটে।” রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, “ভোটের মাঠে এবার খেলা জমবে। আগের মতো কেউ ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারবে না। নৌকার সঙ্গে ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে প্রতিটি কেন্দ্রে। যদি ইলেকশন ফেয়ার হয়, তাহলে মিরাকেলও ঘটতে পারে এখানে।” কেউ কেউ মাথা নেড়ে বলছেন, লড়াই হবে এবার সেয়ানে-সেয়ানে।
নির্বাচনের এই আলোচনা এখন বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনের বিভিন্ন হাট-বাজারে। ১৯৯১ সাল থেকে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। তবে এবার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এবার চাপে আছেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তার বিপক্ষে লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মোংলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ইজারদার।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকালে কথা হয় মোংলা শহরে বাজার করতে আসা বৈদ্যমারী ইউনিয়নের পল্লী চিকিৎসক এমদাদুল হক টুকুর সঙ্গে। তিনি বলেন, “নির্বাচন এখানে জমজমাট হবে। তবে সাধারণ ভোটার যারা আছেন, তাদের মনে ভয়ও আছে। ভোট নিয়ে নৌকার সঙ্গে ঈগলের কোনো সংঘর্ষ হয় কিনা, তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। কেননা নৌকা কোনোভাবেই আসন হারাতে চাইবে না।”
স্থানীয় ভোটার মজিবুর রহমান বলেন, “বিএনপি-জামায়াত তো ভোটে নাই। আমরা দেহি বারো আনা লোকই ঈগলের। নৌকার লোক হইয়াও অনেকে নৌকার বিরুদ্ধে কথা কয়।” প্রবীণ ভোটার সোলেমান মোল্লা বলেন, “এবার যাই হোক, কেন্দ্র যাইয়া ভোট দিবার চাই। গতবার তো আর নির্বাচন হয় নাই। এহন আর নৌকা-ঈগল বুঝি না। এবার যে ভালো প্রার্থী, মোরা তারেই ভোট দিব।”
শুক্রবার সকাল আটটায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। এর আগে শেষ সময়ে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেগম হাবিববুন নাহার ও ঈগল প্রতীকের ইদ্রিস আলী ইজরাদার। এ আসনে আরও পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় তাদের তেমন কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি।
উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, “এ ভোটটিকে বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে যেটি দরকার সেটি হলো ভোট কেন্দ্রে সবার উপস্থিতি।” তিনি আরও বলেন, “পেছনে ফিরে তাকানোর কিছুই নেই। কেননা ২০০১ সালের পর থেকে এ এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে।”
এদিকে ইদ্রিস আলী ইজারদার বলেন, “আমি এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, আমি আওয়ামী লীগের লোক ছিলাম, আছি ও থাকব। আমি আওয়ামী লীগের বিরোধী নয়, তবে প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বিগত দিনে এ এলাকায় যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে অনেক উন্নয়ন হয়নি। অতএব ভবিষ্যতে এ এলাকার উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তা আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বুঝে নিতে পারব বলে বিশ্বাস করি।”